Logo
HEL [tta_listen_btn]

অপরাধীদের অভয়ারণ্য মাসদাইর পৌর শ্মশান!

শহরের মাসদাইর এলাকায় অবস্থিত পৌর শ্মশান ঘাট এখন ভ্রাম্যমাণ অপরাধীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। গভীর রাতে শ্মশান ঘাট থাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন। ভেতরের পরিবেশ ভুতুরে অনেকটাই। রাত যতো গভীর হয় শ্মশানের পরিবেশ ততোটাই গাঁ শিউরে হয়ে উঠে। সাধারণ মানুষের পক্ষে শ্মশানের ভেতরে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। নিরব পরিবেশে রাতভর দল বেধে ভ্রাম্যমাণ অপরাধীরা শ্মশানের ভেতরে বিভিন্ন স্থানে আড্ডা দেয়। রাস্তার পাশে বা অলিতে গলিতে ছিনতাই বা চুরি করে শ্মশানের ভেতরে আশ্রয় নিয়ে থাকে এসব অপরাধীরা। আর এ পৌর শ্মশানটির দ্বায়িত্বে থাকা পুরোহিত যেন চোখে টিনের চশমা পড়ে দেখেও না দেখার ভান করছেন।
স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, মাসদাইর, তাগারপাড়, চৌধুরী কমপ্লেক্স, বিসিক শিল্পনগরীর অনেক গার্মেন্টস রাতে নাইট ডিউটি শেষ করে ছুটি হয়। শ্রমিকরা যখন বাড়ি ফেরে তখন ছিনতাইকারীরা এসব শ্রমিক, সাধারণ পথচারী, বিভিন্ন দূরপাল্লার পরিবহনে আসা যাত্রীসহ ব্যাটারিচালিত অটোচালকদের টার্গেট করে শুরু করে ছিনতাই। আর হাতিয়ে নেয় সর্বস্ব। এছাড়াও মাদক কারবারিরা শ্মশানের ভেতরে অনেকটা নিশ্চিন্তে মাদক বিক্রি ও সেবন করে থাকে। কারণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ভেতরে প্রবেশের আগেই আশপাশের বিভিন্ন দেয়াল পাড় হয়ে পালিয়ে যায় এসব মাদক কারবারের সাথে জড়িত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
সূত্র থেকে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন শ্মশান ঘাটকে কেন্দ্র করে ৬টি অপরাধীচক্র সক্রিয় রয়েছে। এসব গ্রুপের প্রায় ২০-২৫ জন পেশাদার ছিনতাইকারী শ্মশান ঘাটকে কেন্দ্র করে অপরাধের সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছে। এরা দিনের আলোতে আড়ালে থাকলেও সন্ধ্যা হলেই শ্মশান ঘাটে আশ্রয় নেয়। এছাড়াও শ্মশান ঘাটে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানকে ঘিরে প্রকাশ্যে মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের হাট বসায় এসব অপরাধীরা।
শ্মশানে আসা দর্শনার্থী-পূণ্যার্থীরা এসব মাদক বিক্রেতার কাছে এক প্রকার জিম্মি। কোন প্রতিবাদ করলেই তারা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদকারীর উপর চালায় হামলা। এসব অপরাধীদের প্রশ্রয় দেয়ার অভিযোগ রয়েছে শ্মশান ঘাট কমিটির গুটি কয়েক ব্যক্তি ও সিটি কর্পোরেশনের নিয়োগ দেয়া পাহারাদারদের বিরুদ্ধে। পৌর শ্মশানের দায়িত্বে থাকা শান্তি ঘোষাল সবকিছু দেখেও যেন দেখেন না এমনটাই অভিযোগ শ্মশানে আগতদের। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন থেকে শ্মশানের ইনচার্জের দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছে শান্তি ঘোষালকে। লাশ সৎকারের পাশাপাশি পুরো শ্মশান এলাকার নিরাপত্তার বিষয়ে তাকে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু শ্মশানে আগত লাশগুলো সৎকারের জন্য তিনি বিন্দুমাত্র এগিয়ে আসেন না বলে আগে থেকেই অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এছাড়াও শ্মশানে প্রবেশের ফটকটি রাত কয়টা পর্যন্ত খোলা থাকবে সেটাও নির্ধারণ করার কথা তার। কিন্তু তিনি রাত ৮ থেকে ৯টার মধ্যেই শ্মশান ত্যাগ করে। শ্মশানের ভেতরে কখন কি হচ্ছে সেটা সর্ম্পকেও নাকি তিনি সব সময় অবগত থাকেন না। বুধবার রাতে শ্মশানের পুকুরে মাছ ধরতে বাধা দেয়ায় শ্মশানের দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত সৎকারকর্মীকে বেধড়ক মারধর, বাড়িঘর ভাংচুর, প্রতিমার গায়ে থাকা স্বর্ণালংকার লুট করার মত ন্যাক্কারজনক ঘটনা কে বা কারা ঘটিয়েছে সে সম্পর্কেও তিনি কিছুই জানেন না। তাহলে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের দ্বায়িত্ব কি একজন দ্বায়িত্বহীন মানুষের কাছে বুঝিয়েছে সিটি কর্পোরেশন ?
অনুসন্ধানে জানা যায়, রাত হলেই ছিনতাইচক্রের সদস্যরা শ্মশান ঘাট, কবরস্থানের সামনের সড়ক, মাসদাইর পাকাপুল, সরকারি বালিকা বিদ্যালয়, ঈদগাহ মাঠের আশপাশের নিরব স্থানে, সরকারি ৭১নং প্রাইমারি স্কুলের সামনে, তালা ফ্যাক্টরীর মোড়সহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পুরান সড়কের চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটির বিভিন্ন রাস্তার পাশে ওঁৎ পেতে থাকে। তারা সাধারণ মানুষ ও শ্রমিকদের সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে শ্মশানের ভেতরে পালিয়ে যায়। শ্মশানের ভেতরে পালিয়ে যাওয়ার কারণে এসব অপরাধীদের আর খুঁজে পাওয়া যায় না। অরক্ষিত মাসদাইর পৌর শ্মশানের ভেতরে মাদক ও অপরাধীদের আখড়াটি উপড়ে ফেলতে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রসহ জেলা পুলিশ সুপার ও র‌্যাব-১১ এর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ মানুষ।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com