পবিত্র রমজান মাস সামনে রেখে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে মুনাফালোভী চক্র। বিশেষ করে ইফতার ও সাহরিতে যেসব খাবার তৈরি হয় সেগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত পণ্যগুলোকে টার্গেট করেছে তারা। এরমধ্যে রয়েছে পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও জিরা। এসব পণ্যের দাম এক বছরের ব্যবধানে ২০ শতাংশ থেকে ২৬৭ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। এছাড়া ইফতারে সমাদৃত ছোলা, খেজুর, ডাল, চিনির দামও বেড়েছে। একই সঙ্গে এক বছরের ব্যবধানে চাল, মাছ, মাংস, চিনিসহ বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও বেড়েছে। এতে মূল্যস্ফীতির চাপের মধ্যে বাড়তি ব্যয়ের ধাক্কা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে ক্রেতা।
বাজার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এবার রোজায় পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ক কমানোসহ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু মুনাফালোভী ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্যে সেই সুবিধাগুলো ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে সরকার যদি পণ্যভিত্তিক তদারকি বাড়ায় তাহলে বাজারে ইতিবাচক প্রভাব দেখা যেতে পারে।
গত বছরের মার্চের বাজারদর এবং সোমবার বিভিন্ন খুচরা বাজার ও রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদর পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত এক বছরের ব্যবধানে সবচেয়ে বেশি বেড়েছে পেঁয়াজের দাম। গত বছরের এই সময়ে রাজধানীর বাজারে দেশি পেঁয়াজ কেজি ৩০ থেকে ৪০ টাকায় ভোক্তারা কিনতে পারলেও এখন কিনতে হচ্ছে ১১০ থেকে ১২০ টাকায়।
এক বছরের ব্যবধানে ২০০ থেকে ২৬৭ শতাংশ পর্যন্ত পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি নতুন রসুনের দাম কেজিতে ৩৩ থেকে ৫০ শতাংশ দাম বেড়ে ১৫০ থেকে ১৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এবং আমদানীকৃত রসুন ৩৭ থেকে ৪৩ শতাংশ দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২২০ টাকায় খুচরায় বিক্রি হচ্ছে। এক মাস আগেও দেশি পুরনো রসুন ও আমদানীকৃত রসুন কেজি ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। বাজারে এখন নতুন রসুন চলে আসায় দাম কিছুটা কমেছে। দেশি জাতের আদা এক বছরের ব্যবধানে কেজিতে ২০ থেকে ২৫ শতাংশ দাম বেড়ে ২০০ থেকে ২৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
জানতে চাইলে আমদানিকারক ও পাইকারি শ্যামবাজার পেঁয়াজ-রসুন ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মাজেদ বলেন, আমাদের দেশে পেঁয়াজ ও রসুনের যে চাহিদা রয়েছে, তা পূরণে প্রতিবছর বড় একটি অংশ আমদানি করতে হয়। যখনই এসব পণ্যের আমদানি ব্যাহত হয় তখনই বাজারে সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়ে দাম বেড়ে যায়।
তিনি বলেন, সরকার ভারত থেকে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু আমদানি এখনো শুরু হয়নি। এতে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমছে না। ভারতে এখন পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে কেজি ১৮ থেকে ২০ টাকায়। কিন্তু আমাদের দেশের বাজারে ১০০ টাকার বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। আমদানির সুযোগ থাকলে এই সময়ে দেশের বাজারে সর্বোচ্চ ৪০ থেকে ৫০ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হতো।
দেশে মসলার বড় অংশই আমদানি নির্ভর। এ কারণে আমদানিতে কোনো প্রভাব পড়লে দেশে এসব পণ্যের দাম দফায় দফায় বাড়তে থাকে। গত এক বছরের ব্যবধানে জিরার দাম ৮০ থেকে ৮৩ শতাংশ বেড়ে মানভেদে ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকা পর্যন্ত খুচরায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের এই সময়ে প্রতি কেজি ৫০০ থেকে ৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
দেশের পাইকারি গরম মসলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. এনায়েত উল্লাহ বলেন, ডলারের মূল্যবৃদ্ধিসহ অন্য কারণে মসলার কিছু পদের দাম ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। আবার বাড়তি দামে আমদানি করার পর সেই দামের ওপর শুল্কায়ন হচ্ছে। তাতে স্বাভাবিকভাবে খুচরা বাজারে মসলার দাম বেশি পড়ছে।
কাঁচাবাজারে কথা হয় সাদিকুল ইসলাম নামের এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি রাজধানীর বেসরকারি একটি সংস্থায় কর্মরত। তিনি বলেন, বাজারে যাওয়ার কথা শুনলেই ভয় করে। এখন বাজারে শুধু দেশি পেঁয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। এই পেঁয়াজে তো ডলারের প্রয়োজন হয়নি, এরপরও কেন আমাদের ১২০ টাকা দিয়ে এক কেজি পেঁয়াজ কিনতে হবে? বাজারে সরকারের নজরদারি কম থাকার সুযোগ নিচ্ছেন পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের বিক্রেতারা।
পেঁয়াজ আমদানির বিষয়ে বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম জানিয়েছেন, চলতি সপ্তাহে ভারত থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন পেঁয়াজ আসবে। এর ফলে বাজারে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
বাংলাদেশে ৫০ হাজার টন পেঁয়াজ রপ্তানির অনুমতি দিয়েছে ভারত। দেশটির রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ন্যাশনাল কো-অপারেটিভ এক্সপোর্ট লিমিটেডের (এনসিইএল) মাধ্যমে এই পেঁয়াজ বাংলাদেশে রপ্তানি করা হবে। গতকাল এক বিজ্ঞপ্তিতে ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্যবিষয়ক মহাপরিচালকের দপ্তর (ডিজিএফটি) এই তথ্য জানিয়েছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।