সোনারগাঁ উপজেলার পিরোজপুর ইউনিয়নের দুধঘাটা এলাকায় নির্বাচনী সহিংসতায় হৃদয় ভূঁইয়া (২৩) নামে এক যুবক নিহত হয়েছে। এসময় পুলিশ সদস্যসহ আরও ২০ জন আহত হয়েছেন। শনিবার (৯ মার্চ) বিকেলে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে নির্বাচনী ফলাফল প্রকাশকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটে। নিহত হৃদয় ভূঁইয়া দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে। তিনি কায়সার আহম্মেদ রাজু নামের এক প্রার্থীর সমর্থক ছিলেন।
পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে উপনির্বাচনে ইউপি সদস্য পদে দুধঘাটা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে মোরগ প্রতীকে আব্দুল আজিজ সরকার ও তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ রাজু প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ৯শ’ ২৯ ভোট পান আজিজ সরকার। আর তালা প্রতীকে কায়সার আহম্মেদ পান রাজু ৮শ’ ১১ ভোট। এ ফলাফল জানার পর ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং কর্মকর্তা মিজানুর রহমানকে পুনরায় ভোট গণনার জন্য অনুরোধ করা হয়। এতে রাজুর পক্ষে এক ভোট যুক্ত হয়। এ নিয়ে রাজুর মধ্যে অসন্তোষ দেখা দেয়। তিনি প্রিসাইডিং কর্মকর্তাকে তৃতীয় দফায় ভোট গণনার দাবি জানান। এ নিয়ে তাদের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। পরে কৌশলে কেন্দ্রের বাইরে চলে যান রাজু।
বিষয়টি তার কর্মী সমর্থকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে নির্বাচনী দায়িত্বে থাকা লোকজনকে উপজেলায় আসতে বাধা দেয়া হয়। একপর্যায়ে পুলিশ ও ২ প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি, রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করেন। এসময় কায়সার আহম্মেদ রাজুর সমর্থক দুধঘাটা গ্রামের আমির আলী ভূঁইয়ার ছেলে হৃদয় ভূঁইয়া ও কামাল ভূঁইয়ার ছেলে ওমর ফারুক (২৭) গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন আরও ১২ জন। হাসপাতালে নেয়ার পথে হৃদয় ভূঁইয়া মারা যান। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সোনারগাঁ থানার পরিদর্শক (অপারেশন) সাইফুল ইসলাম, সহকারি উপ-পরিদর্শক (এএসআই) খবিরউদ্দিন, কনস্টেবল, মঞ্জু মিয়া, জুয়েল রানা, আব্দুস সালাম, কবির হোসেন, নুর মোহাম্মদ, আল আমিন আহত হন। পুলিশ সদস্যদের সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।
নিহত হৃদয়ের বড় ভাই জহিরুল ইসলাম বলেন, নির্বাচনে রাজু নির্বাচিত হন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের লোকজন আজিজ সরকারকে জয়ী ঘোষণা করে চলে যাওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে পুনরায় ভোট গণনা করে ফলাফল দেয়ার অনুরোধ করলে আজিজ সরকার বহিরাগত লোকজন নিয়ে গুলি করেন। এসময় পুলিশও রাজুর সমর্থকদের ওপর গুলি চালায়।
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম কামরুজ্জামান বলেন, নির্বাচন শেষে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ২ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। এসময় আজিজ সরকারের সমর্থকদের গুলিতে দু’জন গুলিবিদ্ধ হন। এদের মধ্যে হাসপাতালে একজনের মৃত্যু হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে পুলিশের ৮ সদস্য আহত হন।
উল্লেখ্য, পিরোজপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের সদস্য মুজিবুর রহমান গত বছরের ২০ মে ভারতের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। পরে ওই শূন্য পদে এ উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।