বন্দরের ময়না ক্লিনিকে ডাক্তারের পরিবর্তে ক্লিনিকের মালিক ময়না ডাক্তার না হয়েও নিজেই ডেলিভারী করানোর সময় ভুল চিকিৎসায় আফসানা (২২) নামে এক প্রসূতির গোপনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এতে করে ওই প্রসূতির অবস্থা আরো অবনতি হলে দ্রুত নারায়ণগঞ্জ সিটি লাইফ কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসা প্রদান করেন। তবে তার শিশুর অবস্থা শংকামুক্ত হলেও প্রসূতির অবস্থা আশংকাজনক। এ ঘটনায় বিচার দাবি করেছেন প্রসূতির স্বামী ও তার পরিবার।
জানা গেছে, ৪ এপ্রিল বন্দর ইউনিয়ন ৪নং ওয়ার্ডের বাড়িখালী এলাকার রুবেল মিয়ার স্ত্রী আফসানা বেগমের প্রসব ব্যথা উঠলে রাত সাড়ে ৯টায় বন্দর স্কুলঘাটস্থ ময়না ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। গাইনী ডাক্তারের পরিবর্তে ময়নার তত্বাবধানে ছিলো ওই প্রসূতি। এদিকে প্রসূতি আফসানা বেগমকে ২ নার্স ও ময়না নিজেই অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে হাত দিয়ে তার গোপনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলে। এরপর তার স্ত্রীর প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর সেলাই করে দেয়। আর ময়না নিজেই জোরপূর্বক রুবেলের স্ত্রীকে যোনীপথ কেটে ডেলেভারী করিয়ে এক পুত্র সন্তান প্রসব করে। এরপর প্রসূতি যন্ত্রণায় ব্যথায় চিৎকার করতে থাকে। পরে ৯ এপ্রিল গাইনী বিশেষজ্ঞ না দেখিয়ে হাসপাতালের কর্মকর্তা ও ময়না নিজে কন্ট্রাক্টকৃত ১৫ হাজার টাকা নিয়ে তাদের ছুটি দেয়। ১০ দিন বাড়িতে থাকার পর ২০ এপ্রিল তার স্ত্রীর প্রস্রাবের রাস্তা দিয়ে পায়খানা বের হতে থাকে। পরে ওই দিন পুনরায় তাকে ময়না ক্লিনিকে নিয়ে গেলে তাদের আরো ২ দিন থাকতে বলা হয় এবং পরে ভিজিট দিয়ে ময়না বেগমের ব্যক্তিগত চেম্বারে দেখা করতে বলেন। এসময় প্রসূতি আফসানার মা সুমি বেগমের সাথে ময়না বেগমের বাকবিতন্ডা হয়। পরে ওইদিন রাতেই গুরুতর অবস্থায় প্রসূতি আফসানা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি লাইফ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নারায়ণগঞ্জ সিটি লাইফ হাসপাতালের ডাক্তার আশরাফুল নাহার সুইটি বলেন, কোন গাইনী ডাক্তার ছাড়াই অনভিজ্ঞ হাতুড়ে চিকিৎসক দিয়ে প্রসূতিকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে হাত দিয়ে তার যৌনাঙ্গ ছিঁড়ে ফেলে। এরপরই প্রসূতির প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। এরপর সেলাই করে দেয়। যা একজন অনভিজ্ঞ ডাক্তার দ্বারাই সম্ভব। এতে করে প্রসূতির মৃত্যুর ঝুঁকিও হতে পারে।
এ ব্যাপারে প্রসূতির মা সুমি বেগম বলেন, আমার মেয়ে আফসানাকে ময়না ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার পর কোন গাইনী ডাক্তার ছাড়াই ময়না নিজেই জোর করে আমার মেয়েকে ডেলেভারী করিয়ে এক পুত্র সন্তান প্রসব করে। কিন্তু অপারেশন থিয়েটারে আমার মেয়ের জরায়ু,পায়খানা ও প্রসাবের রাস্তা পুরোটাই কেটে এক করে সেলাই করে। এতে করে আমার মেয়ের অবস্থা দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। যা খাবার খায় তা যৌনাঙ্গ দিয়ে বের হয়ে যায়। এতে দিন দিন অবস্থা আরো অবনতি হচ্ছে। আমি ময়না ক্লিনিক নামে এমন হাতুরে চিকিৎসালয়ের বিচার চাই।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন বলেন, ময়না অনুমোদনহীন একটি ক্লিনিক পরিচালনা করেন। এছাড়াও এই ময়না ক্লিনিকে দালালদের অনকলে অপারেশন করেন তারা। ময়না ক্লিনিকে আসা রোগীদের ফুসলিয়ে ময়না নিজেই অপারেশন করিয়ে থাকে। ভ্রাম্যমাণ আদালত ইতোপূর্বে এই ময়না ক্লিনিককে সিলগালা ও জরিমানা করলেও পুনরায় তারা ক্লিনিকের তালা খুলে এসব অবৈধভাবে কাজকর্ম করে থাকে। ইতোপূর্বে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটিয়ে কৌশলে ধামাচাপা দেয়ার অভিযোগও রয়েছে ময়না ক্লিনিকের বিরুদ্ধে।
এদিকে এ বিষয়ে একাধিকবার চেষ্টা করেও ক্লিনিক মালিক ময়নার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। তবে তার স্বামী কাউসার দাবি করেন, অভিযোগটি সত্য নয়। ঘটনার প্রায় এক মাস পর ভুক্তভোগীর স্বজনরা যোগাযোগ করেনি। এখন হঠাৎ কেনো এরকম অভিযোগ করছেন তিনি কিছুই বুঝতে পারছেন না।
ক্লিনিকের মালিক ময়না ডাক্তার কিনা জানতে চাইলে কাউসার বলেন, ময়না কোনো ডাক্তার নন। ময়নার সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করার জন্য একাধিকবার অনুরোধ করলেও তিনি বলেন যা বলার তিনিই বলে দিয়েছেন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।