Logo
HEL [tta_listen_btn]

জেলা শিল্পকলা একাডেমি: কালচারাল অফিসার রুনা লায়লা বেপরোয়া

নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার রুনা লায়লার স্বেচ্ছাচারিতা চরম পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। কাউকেই পরোয়া করতে চান না তিনি। অভিযোগের পাহাড় জমেছে তার বিরুদ্ধে। তিনি পতিত স্বৈরাচারের এমপি-মন্ত্রীদের প্রভাব খাঁটিয়ে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করতেন। শিল্পকলা ও তার পদবীকে ব্যবহার করে শিল্পকলা ভবনের সামনে হকার বসিয়ে মোটা অংকের চাঁদা আদায়, হলরুম ভাড়া প্রদানে অনিয়ম-দুর্নীতি, শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে নিজের ব্যক্তিগত কাজ করানো, আওয়ামী ঘরানার গুটি কয়েক শিল্পীকে প্রাধান্য দেয়া, বাকি শিল্পীদের অবমূল্যায়ণ করাসহ ভুয়া বিল ভাউচার করারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
হলভাড়া নিতে আসা লোকজনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তার আচরণও খুব রূঢ়। তিনি সবাইকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করতেন।
জানা গেছে, স্বৈরাচারের দোসর হওয়ায় তার দাপটের কাছে এতোদিন অসহায় ছিলো সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীসহ শিল্পকলার সংশ্লিষ্টরা। ৫ আগস্টের পর শেখ হাসিনা দেশ ত্যাগ করলে স্বৈরাচারের এই চিহ্নিত দোসর রুনা লায়লার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছেন ভুক্তভোগীরা। সরেজমিন অনুসন্ধানে তার বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠে এসেছে।
আরও জানা যায়, কালচালার অফিসার পদে নিয়োগের শুরু থেকেই বেপরোয়া ছিলেন রুনা লায়লা। সাবেক সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের ঘনিষ্ঠজন হওয়ায় তিনি কাউকে পরোয়া করতেন না। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার পদে আবেদনের সময় লিখিত পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার পর খুব দম্ভের সঙ্গে রুনা লায়লা বলেছিলেন, সাদা খাতা জমা দিয়ে এলাম, দেখি নিয়োগ ঠেকায় কে? সবাইকে অবাক করে ওই পদে নিয়োগও পান তিনি। অথচ এ পদের জন্য নির্ধারিত অভিজ্ঞতাই ছিল না তার। পরীক্ষায় সাদা খাতা জমা দিয়ে দম্ভ প্রকাশ করা রুনা লায়লার বাড়ি বাগেরহাটের মোল্লাহাটে।
নিয়ম অনুযায়ী, কালচারাল অফিসার পদে নিয়োগ পেতে অনার্স পাসের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ১০ বছর এবং মাস্টার্স পাসের ক্ষেত্রে পাঁচ বছরের একাডেমিক অভিজ্ঞতা বাধ্যতামূলক। রুনা লায়লার এমন কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না। এ নিয়ে ওই সময় জাতীয় দৈনিকে সংবাদও প্রকাশিত হয়েছিল। স্বেচ্ছাচারী ও দুর্নীতিবাজ এই মহিলা কীভাবে এখনো ওই পদে আসীন রয়েছেন-তাও এক বিরাট রহস্য!
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে একটানা ১৩ বছর দায়িত্ব পালন কালে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠে লিয়াকত আলী লাকীর বিরুদ্ধে। দীর্ঘ আড়াই বছর অনুসন্ধান শেষে নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে মামলা করে দুদক। ওই মামলায় রুনা লায়লাসহ আরও ২৩ জনকে আসামী করা হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমির অফিসার পদে যোগদানের পর থেকেই শিল্পকলা একাডেমি ভবনের সামনে ৩০জন হকার বসিয়ে গত ৫ বছরে অর্ধকোটি টাকার চাঁদা আদায় করেছেন রুনা লায়লা। হকাররা জানান, দোকান বসানোর জন্য হকারদের কাছ থেকে সালামি বাবদ ৩০ লাখ টাকা এবং ভাড়া বাবদ প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা হিসেবে গত ৫ বছর ২ মাসে আরও প্রায় ২০ লাখ টাকা নেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হকাররা জানান, আমরা গরীব মানুষ, আমাদেরকে টাকা দিতে বলেছে আমরা টাকা দিয়েছি। দোকান প্রতি মাসে ৩০ হাজার টাকা দেয়া হতো, সেই টাকা যে উত্তোলন করতো সে নিতো ৫ হাজার এবং বাকী ২৫ হাজার টাকা রুনা লায়লা আপা নিতো। তবে, ৫ আগস্টের পর থেকে এখন আর কেউ সে টাকা নেয় না বলে জানান তারা।
একাধিক সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন সরকারি অনুষ্ঠানের সাংস্কৃতিক প্রোগ্রামে রুনা লায়লা তার অনুগত-অনুসারী শিল্পীদেরকে পরিবেশনা করাতে প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এ নিয়ে অন্য শিল্পীদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হতো। তারা মনে করেন, শিল্পকলার মতো একটি প্রতিষ্ঠানে কালচারাল অফিসার রুনা লায়লার এমন পক্ষপাতমূলক আচরণ শোভনীয় নয়। সকল শিল্পীকে তার সমানভাবে দেখা উচিত। এদিকে দীর্ঘ সময় ধরে একই জেলায় কমর্রত রয়েছেন রুনা লায়লা। যা সচেতন মহলকে ভাবিয়ে তুলেছেন।
অনেকে মনে করেন, রুনা লায়লা বিগত দিনে এক অদৃশ্য শক্তির বলে একই জেলায় বছরের পর বছর কর্মরত রয়েছেন। সুবিধা বঞ্চিত শিল্পীদের অভিযোগ, করোনাকালীন সময়ে দুস্থ ও অসহায় শিল্পীদের মাঝে সরকারের দেওয়া অনুদানের তালিকায় বারবার নিজ অনুসারীদের নাম প্রদান করেছেন। এছাড়াও তিনি জেলা শিল্পকলা একাডেমিকে নিজের ব্যক্তিগত বাড়ী বানিয়ে রেখেছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সূত্র জানায়, শিল্পকলার স্টাফদের দিয়ে তার ব্যক্তিগত বিভিন্ন কাজ করানো হয়ে থাকে। শিল্পকলার অফিসিয়াল সংশ্লিষ্ট নয় এমন ব্যক্তিদের নিয়ে এসে শিল্পকলাতে আতিথেয়তা করানো হতো। যার খরচ শিল্পকলার ভাউচারে তুলে দিয়ে সরকারি অর্থ নষ্ট করেন বলেও জানা গেছে।
যোগাযোগ করা হলে, নারায়ণগঞ্জ জেলা শিল্পকলা একাডেমির কালচারাল অফিসার রুনা লায়লা সকল অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, শুধু আমার নিয়োগ নয়, ২০১৭ সালে
নিয়োগপ্রাপ্ত ২৩ জনের বিরুদ্ধে দুদকে মামলা চলমান। নারায়ণগঞ্জে ১২০০ শিল্পী, সবাইকে তো ডাকা সম্ভব না। হকারদের কাছ থেকে কোনো টাকা নেই নি। হলরুম ভাড়ার সকল রশিদ আছে, কোনো ভুয়া বিল ভাউচার করা হয়নি।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com