জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য আলহাজ¦ মুহাম্মদ গিয়াসউদ্দিন বলেছেন, ওয়ান-ইলেভেনের আহ্বান যে ব্যবসায়ী সংগঠন করেছিল সেই সংগঠনের নেতৃবৃন্দরা আওয়ামী লীগকে সাহায্য করেছে। তারা ওসমান পরিবারের সাথে সমস্ত মিটিং মিছিলে ছিল। আজ তারা ভিন্ন বেসে সমাজে ফিরে আসতে চায়। ফিরে আসাটা এতটা সহজ নয়। এখানে যে বিকেএমইএ সংগঠন আছে সেই সংগঠনের সভাপতি পালিয়ে গেছে। সহ-সভাপতি এখন ভারপ্রাপ্তের দায়িত্ব পালন করছে। এই হাতেম স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার প্রধান দোসর। তার বক্তব্য বিবৃতি সব আছে। তাকে দেখে এখন আপনারা বিএনপির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বিএনপি নেতাকর্মীদের ব্যবসা দিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি করছেন মনে রাখবেন, বিএনপির সবাইকে একসাথে করে ফেললেও গিয়াসউদ্দিনের মাথা কিনতে পারবেন না। আপনাদের ছাড় দেয়া হবে না। অবিলম্বে এই কমিটি ভেঙে দিয়ে যারা ভালো নিরীহ তাদের দিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে।
তিনি বলেন, ইনশাল্লাহ ক্ষমতায় আসার পর এই এলাকাকে আরো উন্নত করার দিকে আমরা অগ্রসর হবো। এখানে আদমজ জুট মিল ছিল কিন্তু সেটাকে বন্ধ করার পর আদম জিপি সেট করা হয়েছে। এভাবেই আমরা বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে এই এলাকাকে যতটা সম্ভব উন্নয়তের দিকে নিয়ে যাবো। ১৬ বছরের স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার সরকার থাকাকালীন সময় এখানে বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী বাহিনী তৈরি হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনের এলাকায় সিদ্ধিরগঞ্জে ১০টি ওয়ার্ড ছিল, এই ১০টি ওয়ার্ডের অধিকাংশ কাউন্সিলর ছিল গডফাদারের লোক। তারা নিজেরাও সন্ত্রাসী ও লুটেরা। এই সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকায় এমন কোন অপকর্ম নাই যা তারা করেনি। বিএনপি যে ইপিজেড উপহার দিয়েছিল, সেখানে ভরপুর ব্যবসা বাণিজ্য দখল করে তারা ত্রাশ সৃষ্টি করেছে। শুক্রবার (১ নভেম্বর) বিকেলে আদমজী এলাকায় এম ডব্লিউ স্কুল এন্ড কলেজের প্রাঙ্গণে মাদক-চাঁদাবাজি-সন্ত্রাস রোধে সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির জনসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি একথা বলেন।
গিয়াসউদ্দিন বলেন, টাকা লুটপাট করে তারা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এক সন্ত্রাস বাহিনী গঠন করেছিল। একইভাবে আন্দোলনের সময় বিএনপি এবং অন্যান্য নেতাকর্মীদের ওপর তারা এই অস্ত্র দিয়েই হামলা করেছে। হামলা এবং অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে আমাদের এলাকা ছাড়া করে রেখেছে। তাদের কারণে এই এলাকার মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারেনি। আজ যখন ছাত্র-জনতার আন্দোলন বিজয় হয়েছে তখন এ এলাকার মানুষ আনন্দিত। এই সভায় আপনারা যেভাবে আনন্দ উল্লাস করে, ব্যান্ড পার্টি নিয়ে এসেছেন আমি আগে এটা কখনো দেখিনি। আপনাদের এই উল্লাস দেখলে বোঝা যায় যে সন্ত্রাসীদের পতনের পর জনসাধারণের মধ্যে নতুন চেতনার সৃষ্টি হয়েছে। আর যখন আমরা আনন্দ করছি তখন সন্ত্রাসীরা পালিয়ে গেছে, সমাজের দেখানোর মতো মুখ তাদের নেই। তবে পালালে হবে না যে অপরাধ তারা করেছে, তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করতে হবে। ইপিজেডর মিল মালিকদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই, বিগত ১৬ বছর আপনারা বিভিন্ন ভয়ভীতির কারণে অনেক কিছু মেনে নিয়েছেন। কিন্তু এখন যদি ব্যবসা-বাণিজ্য দিয়ে তাদেরকে আরো অর্থনৈতিকভাবে চাঙ্গা করে তোলেন বা সন্ত্রাসীদের আশ্রয় দেন তাহলে এর দায়ভার আপনাদের নিতে হবে। আমাদের দলের লোক হোক বা অন্য কেউ, ইপিজেডে যদি বিশৃঙ্খলার চেষ্টা করে বা কোন মিল মালিক কর্তৃপক্ষকে চাপ দেয়ার চেষ্টা করে তাহলে আমাদের জানাবেন তার বিচারের ব্যবস্থা আমরা করব। আপনার নির্বিঘ্নে ব্যবসা করবেন এটা আমরা চাই। তবে কোন সন্ত্রাসীদের সাহায্য করলে আমরা ব্যথা পাব। আমরা যদি ব্যথা পাই তাহলে সেটার কি জ্বালা কি হতে পারে এটাও আপনারা জানেন।
সাবেক এই সাংসদ বলেন, বই পরিবর্তন করে সিলেবাস পরিবর্তন করে সরকার শিক্ষার্থীদের ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা সাহায্য করতে চাই, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সাহায্য করতে চাই, যাতে আমাদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে উপযুক্ত হতে পারে। যারা পালিয়ে গেছে তারা বাইরে থেকে ষড়যন্ত্র করছে কিভাবে অর্থনৈতিকভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে এই সরকারকে ব্যর্থ সরকারের প্রমাণ করা যায়। আমরা এই সরকারকে ব্যর্থ হতে দিতে চাইনা। তারা দেশের অর্থ-সম্পদ লুণ্ঠন করেছে, বিচার ব্যবস্থাপনা ধ্বংস করেছে শিক্ষা ব্যবস্থা ধ্বংস করেছে, প্রশাসনকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। এক কথায় তারা দেশকে যে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে সেখান থেকে ফিরিয়ে আনতে অনেক পরিশ্রম করতে হবে আমাদের। তারেক রহমানের নির্দেশে দেশের কল্যাণে কাজ করতে চাই। আমাদের সজাগ থাকতে হবে কেউ যাতে আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করতে না পারে।
তিনি আরও বলেন, ওসমান পরিবারের দু’টা সন্তান ছিল আজমিরী এবং অয়ন। তারা কিন্তু কোন দলে নাম লেখায় নি। তাদের রাখা হয়েছিল সন্ত্রাসী এবং অর্থ লুটপাটের জন্য। আজ আমার আফসোস হচ্ছে, নিজে কিভাবে নিজেদের সন্তানকে ধ্বংস করে দিলো। রাজনীতিতে আসার আগেই শেষ।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সভাপতি মো. মাজেদুল ইসলামের সভাপতিত্বে ও সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আকবর হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, জাসাস কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বিএনপি নেতা আনিসুল ইসলাম সানি, জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মাসুকুল ইসলাম রাজীব, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাবেক সভাপতি খন্দকার মনিরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি সুলতান মাহমুদ মোল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জ থানা বিএনপির সহ-সভাপতি আব্দুল্লাহ আল মামুন, ফতুল্লা থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এড. আব্দুল বারী ভূঁইয়া, বিএনপি নেতা এড. হাবিবুর রহমান মাসুম, যুবদল নেতা শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।