Logo
HEL [tta_listen_btn]

বিকল্প না থাকায় নিষেধাজ্ঞা মানছেন না কেউ, পলিথিনের দানা আমদানি বন্ধ করতে হবে

দেশের আলো রিপোর্ট
পলিথিন উৎপাদনের জন্য যে দানা বা কাঁচামাল ব্যবহর করা হয়, তা বাইরে থেকে আমদানি করতে হয়। যদি এই দানা আমদানি করা না হয়, তবে পলিথিন তৈরী করাও সম্ভব হবে না। আর হাতের নাগালে পলিথিন না থাকলে এর ব্যবহার নিয়েও কোন প্রশ্ন উত্থাপিত হবে না। একই সাথে পলিথিনের সাশ্রয়ী বিকল্প ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
যদি পলিথিনের কাঁচামাল বা দানা ইমপোর্ট করা বন্ধ হয়, বাংলাদেশে পলিথিন উৎপাদন হবে না। সেই সাথে পলিথিন উৎপাদনের যে দানাগুলো দেশে মজুদ আছে তা জব্দ করতে হবে। পলিথিন উৎপাদন বন্ধের জন্য এর বিকল্প নেই। সেই সাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
নভেম্বরের শুরু থেকে পলিথিন ব্যাগের ব্যবহার ও উৎপাদন নিষিদ্ধ করে সরকার। যারা এই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করবে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। নারায়ণগঞ্জে কাঁচাবাজারসহ কয়েকটি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। পলিথিন শপিংব্যাগ জব্দসহ জড়িতদের জরিমানা করা হয়। এক মাস পেরিয়ে গেলেও জেলার বিভিন্ন কাঁচাবাজারে, পাড়া-মহল্লার মুদি দোকানে পলিথিনের অবাধ ব্যবহার চলছেই।
পলিথিনের পর্যাপ্ত বিকল্প ব্যবস্থা না থাকায় বিড়ম্বনায় পড়ছেন বাজারের ক্রেতা-বিক্রেতারা। সাধারণ মানুষ ও দোকান মালিকরা বলছেন, দুই-একদিনের অভিযানে বাজারে কোন পরিবর্তন হয় না। ম্যাজিস্ট্রেট আসলে দোকানিরা পলিথিন সরিয়ে রাখেন। তিনি চলে গেলে যেই লাউ সেই কদু অবস্থা। যারা পলিথিন উৎপাদন করে সেই দিকে সরকারকে কাজ করতে হবে। পলিথিনের বিকল্পও বাজারে নিয়ে আসতে হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর নারায়ণগঞ্জ কার্যালয় থেকে জানা যায়, ৩ নভেম্বর থেকে ১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযান পরিচালনা করে ১ হাজার ২ ‘শ ২ কেজি পলিথিন ব্যাগ জব্দ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও পুলিশ সদস্যদের নিয়ে এই অভিযান পরিচালিত হয়। এপর্যন্ত কয়েকটি পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধসহ বিভিন্ন দোকান মালিক-ব্যবসায়ীদের সর্বমোট ১ লাখ ৪৭ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সচেতন মহল বলছেন, পলিথিন উৎপাদনকারী কাঁচামাল আমাদানি বন্ধ করার পাশাপাশি বিভিন্ন কারখানা থেকে মজুদকৃত কাঁচামাল জব্দ করতে হবে। সেই সাথে পলিথিনের সাশ্রয়ী বিকল্প ব্যবস্থা সাধারণ মানুষের জন্য সহজলভ্য করতে হবে। পলিথিন ব্যবহার বন্ধে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এই সকল পদক্ষেপের মাধ্যমে পলিথিন ব্যবহার বন্ধে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি বলেন, কয়েক যুগ ধরে পলিথিন ব্যবহার করতে করতে আমরা অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। পাকিস্তান আমলে আমরা দেখেছি, কোন পলিথিনের ব্যবহার ছিল না। বাজার থেকে কিছু কিনে আনতে হলে কাগজের ঠোঙ্গা ব্যবহার করা হতো। বাজার করার জন্য চটের ব্যাগ ব্যবহার হত। সে সময় আমাদের পলিথিন ছিল না কিন্তু বাজার-সদায় করতে কোন কিছু আটকে থাকে নি। কয়েক যুগ ধরে পলিথিনের উপর নির্ভরশীল হওয়ার কারণে, মনে হচ্ছে পলিথিন চলে গেলে বাজার-মার্কেটে কেনাকাটা আমাদের জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে যাবে। এই চিন্তাটা আসলে ভুল।
তিনি বলেন, পলিথিন বন্ধের জন্য একটি সময়ে নির্ধারণ করে দিয়ে বলা হলো পলিথিন আর উৎপাদন হবে না। এভাবে পলিথিন উৎপাদন বন্ধ হবে না। পলিথিন উৎপাদনের জন্য যে দানা বা কাঁচামাল, তা বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। যদি এই দানা আমদানি করা বন্ধ হয়, তবে পলিথিন বন্ধ করা সম্ভব। যদি পলিথিনের কাঁচামাল বা দানা ইমপোর্ট করা বন্ধ হয়, বাংলাদেশে পলিথিন উৎপাদন হবে না। সেই সাথে পলিথিন উৎপাদনের যে দানাগুলো দেশে মজুদ আছে তা জব্দ করতে হবে। পলিথিন উৎপাদন বন্ধের জন্য এটা মূল পথ। সেই সাথে জনসচেতনতা বৃদ্ধিও ইতিবাচক প্রভাব রাখতে পারে।
গণসংহতি আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন বলেন, পলিথিন বন্ধে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেটি অত্যন্ত ভালো। তবে এর পাশাপাশি মানুষের মাঝে জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে আরও উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। প্রশাসন চাইলে আইনীভাবে একটা চাপ সৃষ্টি করতে পারে, যাতে করে পলিথিন উৎপাদন-ব্যবহারে আগ্রহ সকলের কমে যায়। পলিথিনের বিকল্প যদি পাট হয়, তবে পাটের ব্যাগকে সহজলভ্য করতে হবে। মানুষদের এই বিকল্প ব্যাগ ব্যবহারে উৎসাহী করতে হবে।
এদিকে, নারায়ণগঞ্জে পলিথিন বন্ধে নিয়মিত অভিযান অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো. আলমগীর হুসাইন। তিনি বলেন, পলিথিন বন্ধে আমাদের মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে অভিযান, জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে সকল কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। তবে সাধারণ মানুষের মাঝে যেরকম সাড়া পড়া দরকার, সে দিকে ঘাটতি আছে। নারায়ণগঞ্জে এরইমধ্যে কয়েকটি অবৈধ পলিথিন উৎপাদনকারী কারখানা বন্ধ করা হয়েছে। গতকালও একটি কারখানায় অভিযান চালিয়ে পলিথিন জব্দসহ কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জনসাধারণকে আরও সচেতন হতে হবে। আগের চাইতে পাটের ব্যাগ কিছুটা সহজলভ্য হয়েছে। বাজার করতে সকলেই এটি সংগ্রহ করে রাখতে পারেন। পলিথিন ব্যবহারে সবাই অভ্যস্ত হয়ে আছেন, এ মনোভাব থেকে সরে আসতে হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com