নিজস্ব সংবাদদাতা
ফুলপ্রেমীদের দৃষ্টি এখন ফুলেরগ্রাম হিসেবে পরিচিত বন্দরের সাবদী। কয়দিন পরেই বিশ্ব ভালবাসা দিবস। এর সপ্তাহখানেক পরেই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দুই দিবসে ফুলের চাহিদা তুঙ্গে থাকে। এই দুই দিবসে নারায়ণগঞ্জের বন্দরের সাবদীতে ৬-৭ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারি এলেই বন্দরে সাবদীতে ফুলের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে আশপাশের কয়েক গ্রামে।
বন্দর উপজেলার কলাগাছিয়া ইউনিয়নের নদীতীরবর্তী মনোরম গ্রাম-সাবদী। গত এক দশক ধরে শুধুমাত্র ফুলের কারণে দেশজুড়ে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে গ্রামটি। ফুলপ্রেমীরা এই গ্রামের নাম দিয়েছেন ‘ফুলের গ্রাম’। ফুলের সফল ব্যবসার কারণে এই গ্রামটি এখন বিনোদন কেন্দ্রেও পরিণত হয়েছে। গড়ে উঠেছে বিনোদন কেন্দ্র। সাপ্তাহিক ছুটির দিন ও অন্যান্য বন্ধের দিনে উপচে পড়া ভীড় জমে।
ভালবাসা দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসকে সামনে রেখে সাবদীর ফুলচাষীরা ব্যস্ত সময় পার করছেন। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে শুধু ফুল আর ফুল। কোন কোন বাগানে কলি থেকে ফুল ফোটে গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে।
সরেজমিন সাবদীতে ফুলের গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, ফুল চাষীরা ফুলগাছে যত্ন নিচ্ছেন। নিবিরভাবে পরিচর্যা করছেন ফুলের। কিছুদিন পরই পুরো এলাকাজুড়ে মিষ্টি গন্ধ ছড়িয়ে পড়বে। ফুলের বাগানে ফুলপ্রেমীদের আনাগোনা শুরু হয়েছে। আর কিছুদিন পরে বাগানে বাগানে ফুলপ্রেমীদের ভীড় বাড়বে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। কলাগাছিয়া ইউনিয়নের এসব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার নারী-পুরুষ এ ফুল চাষে এখন স্বাবলম্বী। দেশী-বিদেশী মিলিয়ে এসব জমিতে ২৫ থেকে ২৬ ধরনের ফুল চাষ হয়। পহেলা ফালগুন, ভালোবাসা দিবস ও মাতৃভাষা দিবসে ৬-৭ কোটি টাকার ফুলও বিক্রি হয়। সাবদী থেকে ফুল বিক্রি হয় নারায়ণগঞ্জ শহরে, ঢাকার শাহবাগ, গুলশান, বনানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। দিবস ছাড়াও সারা বছরই বিয়ে, জন্মদিন পূজা-পার্বণে ফুলের বেশ চাহিদা থাকে। এ সময় দামও ভালো পাওয়া যায়। শুধু সাবদী গ্রামেই নয়, ফুলের ব্যবসা সফল হওয়ার পরে পাশের গ্রাম দীঘলদি, সেলশারদি, মাধবপাশা ও আইছতলাসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে বাণিজ্যিকভাবে এ ফুল চাষ করা হচ্ছে।
বন্দর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তাসলিমা আক্তার জানান, বন্দরের প্রায় ৪শ’ হেক্টর জমিতে ফুলের চাষ হয়। ফুলচাষের সঙ্গে সরাসরি জড়িত কয়েকশ’ কৃষক। তবে ফুল ব্যবসা ও বিক্রির সঙ্গে পরোক্ষভাবে আরও হাজারখানে লোক জড়িত। এ ফুল চাষকে ঘিরে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সরকারীভাবে কৃষকদের ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ করতে নানা উদ্যোগ রয়েছে।
ফুল ব্যবসায়ী আক্তার হোসেন বলেন, গতবছর ফুলের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিনই রাজধানী ঢাকা শাহবাগহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে শত শত ফুল প্রেমীরা ভীড় জমাতেন। তবে এবার তেমন লক্ষ করা যাচ্ছে না। বিভিন্ন জেলা থেকে ফুল ব্যবসায়ীরা ভিড় জমান সাবদি গ্রামে ফুল ক্রয় করার জন্য। কিন্তু বর্তমানে দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতে কেমন যাবে ফুলের বাজার আল্লাহই জানেন।
সাবদির সবচেয়ে বড় ফুল বাগানের মালিক মো. জাকির হোসেন বছরের বারো মাসই তিনি ফুল চাষ করেন। তার বাগানে চাষ করা হচ্ছে- গোলাপ, গাঁদা, রজনীগন্ধা, গ¬াডিওলাস, জারবেরা, বাগানবিলাস, চন্দ্রমল্লিকা, ডালিয়া, কসমস, দোলনচাঁপা, নয়নতারা, মোরগঝুঁটি, কলাবতী, বেলি, জিপসি, চেরি, কাঠমালতি, আলমন্ডা, জবা, রঙ্গন, টগর, কাঠগোলাপ, রক্তজবা ও ক্যালেন্ডুলা।
আরেক ফুল ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, এবার পরিস্থিতি খুবই নাজুক। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে আগাম বুকিং কম হয়েছে। অন্যবছর এইসময় বুকিং থাকত সেখানে এবার নাই বললেই চলে।
এই গ্রামের বিনোদনকেন্দ্র গ্রীণ গার্ডেন পার্কের মালিক মিন্টু মিয়া জানান, ফুল চাষের জন্য মানসম্পন্ন বীজ, চারা ও টিস্যু কালচারের জন্য গবেষণাগার নেই। স্বল্প সুদে ঋণের সুবিধা পাওয়া যায় না। উৎপাদিত ফুল সংরক্ষণে কোনো হিমাগার এবং বাজারজাত করারও ভালো ব্যবস্থা নেই। এসব সমস্যার সমাধান হলে এ গ্রামে ফুলের চাষ আরো বাড়বে, আগ্রহী হবে কৃষকরা। ফুল চাষ ও বিনোদন কেন্দ্র এসব মিলিয়ে একটি বৃহত্তর পরিকল্পনা নেয়া হলে এখানে অনেক কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে সরকারও বড় অঙ্কের রাজস্ব পাবে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।