দেশের আলো রিপোর্ট
নারায়ণগঞ্জ শহরের ৩৭ নং আমলাপাড়া আই.ই.টি (বালক) সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরকারি নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে পরীক্ষার ফি আদায় ও অবৈধভাবে পরীক্ষা গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোমা সাহা ও সহকারী শিক্ষক মাকসুদা বেগমের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে, যা বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থাকে সরকারি নির্দেশনার বাইরে নিয়ে যাচ্ছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণিতে কোনো লিখিত মূল্যায়ন বা পরীক্ষা গ্রহণের বিধান নেই। এছাড়া, অন্য শ্রেণির পরীক্ষা চলাকালীন প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাওয়ার নির্দেশ রয়েছে। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে যে, সহকারী শিক্ষক মাকসুদা বেগম ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোমা সাহার সঙ্গে যোগসাজশে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের তিনটি বিষয়ে পরীক্ষা নিয়েছেন এবং প্রতি শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ২৫ টাকা করে ফি আদায় করেছেন। এমনকি, পরীক্ষা শেষে ২৬ থেকে ২৮ আগস্ট পর্যন্ত প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণির কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, যা সরকারি নীতিমালার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে কোনো স্থায়ী প্রধান শিক্ষক নেই। সহকারী শিক্ষক সোমা সাহা কয়েক মাস ধরে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করে নিজের মনগড়া নিয়ম চালু করেছেন। এই ঘটনায় স্থানীয় অভিভাবক ও সচেতন মহলের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সোমা সাহা ও সহকারী শিক্ষক মাকসুদা বেগম ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তারা দাবি করেছেন, অভিভাবকদের চাপের মুখে এই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে এবং ফি স্বেচ্ছায় প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া, অন্য শ্রেণির পরীক্ষায় বিঘ্ন ঘটতে পারে এই আশঙ্কায় প্রাক-প্রাথমিক শ্রেণি বন্ধ করা হয়েছে বলে তারা জানান। তবে, সরকারি নীতিমালায় ফি আদায় ও ক্লাস বন্ধের কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহানারা খানম বলেন, “সরকারি নিয়ম-নীতি উপেক্ষা করার কোনো সুযোগ নেই। আমি এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।” এদিকে, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফেরদৌসী বেগম বলেন, “আমার কাছে এ বিষয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। আপনার (প্রতিবেদক) কাছ থেকে প্রথম শুনলাম। প্রাক-প্রাথমিকে পরীক্ষা বা ফি গ্রহণের কোনো বিধান নেই। এছাড়া, অন্য শ্রেণির পরীক্ষার জন্য বিদ্যালয় বন্ধ করাও গ্রহণযোগ্য নয়। এই তিনটি বিষয় তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এ ঘটনায় বিদ্যালয়ের শিক্ষা ব্যবস্থা ও সরকারি নীতিমালার প্রতি শিক্ষকদের এই স্বেচ্ছাচারিতা নিয়ে স্থানীয় অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। শিক্ষা কর্মকর্তারা এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, তদন্ত ও ব্যবস্থা গ্রহণের অগ্রগতি নিয়ে সবাই অপেক্ষায় রয়েছেন।
শিক্ষাবিদ ও শিশু মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন অনিয়ম কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রচন্ড ক্ষতি করার পাশাপাশি বিদ্যালয়ের সার্বিক শিক্ষা কার্যক্রম ও সরকারি নীতিমালার বাইরে চলে যাচ্ছে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।