ফতুল্লা সংবাদদাতা
ইসদাইরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ইভান হত্যার পেছনে কারা কলকাঠি নেড়েছেন তা ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে শুরু করেছে। একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রমতে, ইসদাইর এলাকার একটি উঠতি সন্ত্রাসী গ্রুপের ইন্ধনেই ইভানকে অকালে প্রাণ দিতে হয়েছে। প্রসঙ্গত, গত রোববার রাতে ইসদাইর পৌর স্টেডিয়ামের সামনে শফিকুল-পাগলা সাইফুল-বাবুগংদের হাতে অকালে প্রাণ দিতে হলো ইসদাইর এলাকার এমএ আজম বাবুর ছেলে ডিস ব্যবসায়ী নাহিয়ান আজম ইভানকে। প্রশ্ন ওঠেছে, কি কারণে এভাবে কুপিয়ে নৃশংসভাবে খুন হতে হলো ইভানকে। এ খুনের পেছনে কাদের হাত রয়েছে ? হত্যাকান্ডের পর আটককৃতরা পুলিশ রিমান্ডে কতটুকু স্বীকার করবে সেটাও দেখার বিষয়ে রয়েছে। তবে স্থানীয়দের মতে, ইভান হত্যার মাস্টারমাইন্ড হতে পারে আপন দুই ভাই উজ্জল ও সম্রাট। গত মার্চ মাসে ইভানের বাড়ির সামনেই গিয়ে এ তিন সহোদর ইভানকে হত্যা করতে গিয়েছিলো। কিন্তু ভাগ্যগুণে বেঁচে গিয়েছিলো ইভান আর উল্টো গ্যাড়াকলে পড়ে ছিলো শফিকুল ও পাগলা সাইফুল। সেই ঘটনায় গুরুতর রক্তাক্ত জখম হয়ে ইভানগংয়ের বিরুদ্ধে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলাও করেছিলো সাইফুলের পরিবার। কিন্তু বিষয়টি দেনদরবারের মাধ্যমে শেষ করতে গিয়ে যে পরিমাণ টাকা দেয়ার কথা ছিলো তার থেকে মাত্র এক লাখ টাকা দেয়া হয়েছিলো উজ্জলের কাছে। কিন্তু সেই টাকা শফিকুলরা পায়নি বলেই হত্যাকান্ডের মত এমন ন্যাক্কারজনক কাণ্ড ঘটিয়েছে শফিকুল-পাগলা সাইফুলগং-এমনটাই বলছেন ইসদাইরের সাধারণ মানুষ।
গত রোববার ইভান হত্যাকান্ডের পর প্রায় ৬ মাস পুর্বে ইভানের বাড়ির সামনে যে ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটে ছিলো তার একটি ভিডিও ফুটেজ প্রকাশ করা হয়েছে জাগো নারায়ণগঞ্জ২৪.কমের ইউটিউবে। সেখানে দেখা যায় রক্তাক্ত ইভানকে হাতে মুঠোফোনে শফিকুল ও পাগলা সাইফুলকে উদ্দ্যেশ্য করে কাকে যেন বলতে দেখা যায় “ডাক দে তোর উজ্জল বাবারে”।
এদিকে ইভান হত্যাকান্ডে জড়িতদের নিয়েও শুরু হয়েছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ। ৩ দিনের রিমান্ডে থাকা দুই আসামী পাগলা সাইফুল এবং টুটুল রয়েছেন পুলিশী হেফাজতে। তবে উজ্জল ও সম্রাট এ হত্যাকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত তার কিছু ডকুমেন্ট গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে রয়েছে পাগলা সাইফুলের দেয়া তথ্যে। সেখানে পাগলা সাইফুলকে বলতে দেখা যায় যে, ইভানকে হত্যা করতে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান উজ্জলের নির্দেশনা ছিলো। তাকে বলতে শোনা যায় যে, উজ্জল গিয়াসউদ্দিনের রাজনীতি করেন এবং তাতীদলের সাথে যুক্ত হয়েই তিনি রাজনীতি করেন। এছাড়াও উজ্জল ও তার ভাই ইমাম হাসান সম্রাটের সাথে নাকি তারা বিভিন্ন মিছিল মিটিংয়ে যান সে কথাও শোনা গেছে। অন্যদিকে স্থানীয়রা জানান,ইভান হত্যাকান্ডের একদিন আগে সপরিবারে কক্সবাজারে চলে যায় ইমাম হাসান সম্রাট। তবে সেখানে যাওয়ার পুর্বে এ হত্যাকান্ডের ছক তৈরী করে গিয়েছে কিনা সেটা কতটুকু সত্য-মিথ্যা তা খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের দৃষ্টি কামনা করেন।
অপরদিকে জাগো নারায়ণগঞ্জের ইউটিউবে প্রচারিত উক্ত ভিডিও ফুটেজে ইভানের মুখে উজ্জল এর নাম এবং ইভান হত্যাকান্ডের পর তার পিতা এমএ আজম বাবুর থানায় দায়ের করা মামলায় উল্লেখ করেন যে, সেই ঘটনা মিমাংসা করার জন্য শফিকুল-পাগলা সাইফুল-বাবুগংএর পক্ষে বিএনপি নেতা সিদ্দিকুর রহমান উজ্জলের দেনদরবারের বিষয় সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে ওরা তিন সহোদর মুলত তারই একনিষ্ঠ ছিলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে যে সেই দেনদরবারের জন্য তিন লাখ টাকাও নাকি নেয়া হয়েছিলো। কিন্তু সে টাকার বিন্দুমাত্রও পায়নি সেই সময়ে ঘটনায় আহত শফিকুল-পাগলা সাইফুল সহোদর। ইভানকে কুপোকাত করতে গিয়ে উল্টো নিজেরা কুপোকাত হওয়া এবং সেই সময়ে ইভানের মুখে উজ্জল শব্দটি উচ্চারিত হওয়ায় স্থানীয়দের সন্দেহের দৃষ্টি এখন উজ্জল এর প্রতি। তবে স্থানীয়দের দাবী, সেদিনের সেই ঘটনার বিষয়টি অবশ্যই উজ্জল অবগত রয়েছেন এবং পাশাপাশি ইভানও হয়তবা জেনেছেন যে,তার উপর হামলার জন্য উজ্জলের লোক শফিকুল-পাগলা সাইফুল এসেছে। যদি তাই না হতো তাহলে ইভান মুঠোফোনে উজ্জলের নামটি উচ্চারন করতো না।
সিদ্দিকুর রহমান উজ্জলের ছোটভাই যুবদল নেতা হাসান ইমাম সম্রাট হচ্ছেন ইভান হত্যাকান্ডে দায়ের করা মামলার ৪নং এজাহারনামীয় আসামী শুক্কুরের উকিল বাবা।
স্থানীয়দের দেয়া তথ্যমতে, গত বছরের ৫ আগস্টের পর হতে পুরো ইসদাইর এলাকাতে চলছে উজ্জল-সম্রাটের রামরাজত্ব। মুখে প্রতিবাদী হলেও এ দুইয়ের অন্তর পুরোটাই অপরাধী মনোভাবের। এলাকার ডিস ব্যবসা-ইন্টারনেট ব্যবসা-ইট-বালু-সিমেন্ট ব্যবসাসহ কোন সেক্টর বাদ নেই যা উজ্জল-সম্রাটের নিয়ন্ত্রনে নেই। এছাড়াও এলাকাতে মাদকের ব্যাপক বিস্তার লাভেও এ দুইভাইয়ের যথেষ্ট অবদান রয়েছে বলে জানান নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় অনেক বাসিন্দা।
ইভান হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত আসামীদের সাথে উজ্জল-সম্রাটের সম্পৃক্ততার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ জানান ইসদাইরের আপামর জনগন।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।