ফিরোজ আহমেদ
নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের আওতা থেকে সরিয়ে রাখার পেছনে ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা রয়েছে প্রভাবশালী বাস মালিক গোষ্ঠীর। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহন খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে। মেট্রোরেল চালু হলে তাদের ব্যবসায় বড় ধরণের ধাক্কা লাগবে। রাজনৈতিক যোগসাজশে তারা মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জকে বাদ দিতে পেরেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরণের প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী মহলই নারায়ণগঞ্জবাসীর ন্যায্য অধিকারকে বঞ্চিত করছে। অভিজ্ঞ মহলের মতে, এখন নারায়ণগঞ্জবাসীর উচিত হবে সংগঠিত ও ধারাবাহিকভাবে দাবিকে জোরদার করা, যাতে সরকার মেট্রোরেল পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জকে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয়।
প্রসঙ্গত, শুরু থেকেই এমআরটি-২ (মাস র্যাপিড ট্রানজিট লাইন-২) প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জের নাম কখনোই ছিল না। অথচ রাজনৈতিক বক্তৃতা আর নানা প্রতিশ্রুতির মাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে নারায়ণগঞ্জবাসীকে আশার বাণী শুনিয়ে আসা হয়েছে। বাস্তবে এই প্রকল্পে নারায়ণগঞ্জের কোনো সংযোগই রাখা হয়নি। মেট্রোরেলের মতো আধুনিক গণপরিবহন ব্যবস্থার বাইরে পড়ে থাকায় শহরের সাধারণ মানুষ ক্ষোভ ও হতাশায় ভুগছে।
প্রকৃতপক্ষে নারায়ণগঞ্জ যুক্ত ছিল এমআরটি-৪ এবং বিআরটি-৭ (যা মেট্রোরেল আওতাভুক্ত নয়) প্রকল্পের সঙ্গে। কিন্তু সাম্প্রতিক ফিজিবিলিটি স্টাডির মাধ্যমে এমআরটি-৪ বাতিল হয়ে গেছে। অর্থাৎ নারায়ণগঞ্জবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেল আপাতত কাগজেই সীমাবদ্ধ।
তবে এখনো পুরোপুরি দরজা বন্ধ হয়নি। এমআরটি-২ এখনো চূড়ান্ত হয়নি। রাজনৈতিক সদিচ্ছা, পরিকল্পনা পরিবর্তন এবং নাগরিক সমাজের একযোগে আন্দোলনের মাধ্যমে চাইলে নারায়ণগঞ্জকে এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করা সম্ভব। কিন্তু এটি কোনো সহজ কাজ নয়। দীর্ঘস্থায়ী এবং সংগঠিত প্রচেষ্টা ছাড়া এমন একটি বৃহৎ অবকাঠামোগত প্রকল্পে সংযুক্ত হওয়া কঠিন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জকে মেট্রোরেলের আওতা থেকে সরিয়ে রাখার পেছনে ষড়যন্ত্রমূলক ভূমিকা রয়েছে কিছু প্রভাবশালী বাস মালিক গোষ্ঠীর। এই গোষ্ঠী দীর্ঘদিন ধরে গণপরিবহন খাতে একচেটিয়া আধিপত্য বজায় রেখেছে। মেট্রোরেল চালু হলে তাদের ব্যবসায় বড় ধরণের ধাক্কা লাগবে। রাজনৈতিক যোগসাজশে তারা মেট্রোরেল প্রকল্প থেকে নারায়ণগঞ্জকে বাদ দিতে পেরেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। অনেকেই মনে করছেন, এই ধরনের প্রভাবশালী স্বার্থান্বেষী মহলই নারায়ণগঞ্জবাসীর ন্যায্য অধিকারকে বঞ্চিত করছে।
নারায়ণগঞ্জ একটি জনবহুল শিল্পনগরী। প্রতিদিন লাখ লাখ মানুষ রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করেন। সড়কপথে দীর্ঘ যানজট ও ভোগান্তি শহরটির মানুষের জীবনের অন্যতম বড় সমস্যা। মেট্রোরেল সংযুক্তি হলে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হতো না, বরং অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও নগরায়ণের ক্ষেত্রেও বড় ইতিবাচক প্রভাব পড়তো। অথচ ষড়যন্ত্র এবং রাজনৈতিক ভাঁওতাবাজির কারণে শহরটি এখনো আধুনিক গণপরিবহন থেকে বঞ্চিত।
পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, ঢাকা-কেন্দ্রিক পরিবহন অবকাঠামো পরিকল্পনায় নারায়ণগঞ্জকে উপেক্ষা করা হচ্ছে। অথচ নারায়ণগঞ্জ শুধু শিল্প ও বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্রই নয়, এটি দেশের অন্যতম ঘনবসতিপূর্ণ শহর। এই শহরকে বাদ দিয়ে টেকসই গণপরিবহন ব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব নয়।
নগর পরিকল্পনাবিদ, আসাদুজ্জামান বলেন, “মেট্রোরেল কেবল ঢাকা শহরের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে দেশের সামগ্রিক পরিবহন সংকট নিরসন হবে না। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ করিডোরকে মেট্রোরেলের আওতায় আনা জরুরি। এটি না হলে শিল্পাঞ্চলের শ্রমিক, কর্মজীবী মানুষ ও সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছাবে।”
তাঁর মতে, রাজনৈতিক স্বার্থ বা কোনো গোষ্ঠীর চাপের কাছে নতি স্বীকার করলে দেশের পরিবহন ব্যবস্থা কখনোই টেকসই হবে না। তিনি মনে করেন, নারায়ণগঞ্জবাসীর উচিত সংগঠিত ও ধারাবাহিকভাবে দাবিকে জোরদার করা, যাতে সরকারকে মেট্রোরেল পরিকল্পনায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য করা যায়।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।