নিজস্ব সংবাদদাতা
স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী কদমরসুল সেতু প্রকল্পের ডিজাইনকে কিভাবে আরও আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব করা যায় সে বিষয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, আরলিংটনের সলিড ওয়েস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেনের সহযোগিতা নিয়ে প্রকল্পের ডিজাইন সংশোধন করার পরামর্শ দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনে (এনসিসি) জাইকার অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন জালকুড়ি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপ-প্রকল্প সাইট এবং এলজিইডি ও এনসিসি যৌথভাবে বাস্তবায়নাধীন আইকনিক কেবল-স্টেইড কদমরসুল সেতু উন্নয়ন প্রকল্প পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
শুক্রবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকালে বর্জ্য ব্যবস্থাপনা উপ-প্রকল্প স্থানে উপস্থিত হলে তাঁকে ফুল দিয়ে স্বাগত জানান নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ড. আবু নছর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ এবং জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা।
এ সময় সফরসঙ্গী হিসেবে উপস্থিত ছিলেন টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, আরলিংটনের সলিড ওয়েস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেন।
পরিদর্শনকালে এনসিসির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুল আজিজ ইউডিসিজিপি ও এলজিইডি কর্তৃক গৃহীত স্যানিটারী ল্যান্ডফিল নির্মাণ প্রকল্পের বিস্তারিত তুলে ধরেন।
এসময় রেজাউল মাকছুদ জাহেদী বর্ণিত প্রকল্পের ডিজাইনকে কিভাবে আরও আধুনিক এবং পরিবেশবান্ধব করা যায় সে বিষয়ে টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়, আরলিংটনের সলিড ওয়েস্ট ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. শাহাদাত হোসেনের সহযোগিতা নিয়ে প্রকল্পের ডিজাইন সংশোধন করার পরামর্শ দেন। তাছাড়া আধুনিক স্যানিটারি ল্যান্ডফিল ব্যবস্থাপনা, লিচেট ট্রিটমেন্ট, কম্পোস্টিং, এরোবিক ডাইজেশন, বায়োগ্যাস উৎপাদন, প্লাস্টিক দিয়ে সড়ক নির্মাণ এবং অন্যান্য পুনর্ব্যবহারযোগ্য সুযোগের পাশাপাশি বির্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর করার উপর জোর দেন।
তিনি দ্রুত বর্ধনশীল নারায়ণগঞ্জ এলাকায় টেকসই ও স্থিতিশীল উন্নয়ন নিশ্চিত করতে যথাযথ আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয়েরও ওপর বিশেষ গুরুত্বারোপ করেন।
জালকুড়ি এলাকার কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সাইট পরিদর্শন শেষে সার্কিট হাউজে উপস্থিত হলে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক তার বিগত ৮ মাসের সার্বিক কার্যক্রম, বিভিন্ন উদ্যোগসহ ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনার সচিত্র প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এ সময় নারায়ণগঞ্জের ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা, জলাবদ্ধতা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিশেষ করে কদমরসুল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার উপর অধিক মনোনিবেশ করার জন্য গুরুত্বারোপ করেন। সেইসাথে নারায়ণগঞ্জের যানজট নিরসনে নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রিয় বাস টার্মিনাল শহরের বাহিরে স্থানান্তরের জন্য অনুরোধ জানান।
এ বিষয়ে ডিপিপি প্রণয়ন কার্যক্রম কাজ চলমান রয়েছে বলে এনসিসির তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজগর হোসেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিবকে অবহিত করেন।
ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্টের ভিত্তিতে রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ, ব্যবসায়ী, বাস মালিক সমিতিসহ সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে আলোচনা করে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব মন্ত্রণালয়ে প্রেরণের জন্য নির্দেশ দেন স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব। এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আহসানুজ্জামান কদমরসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্পের অগ্রগতি সম্পর্কে অবহিত করেন।
মোঃ রেজাউল মাকছুদ জাহেদী ৫নং ঘাট কদমরসুল সেতু নির্মাণ প্রকল্প স্থান সরেজমিনে পরিদর্শন করে ব্রিজ নির্মাণের ফলে যেন শহরে যানজট সৃষ্টি না হয় এ বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের সচিব মোঃ নূর কুতুবুল আলম, প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল আজিজ, তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো. আজগর হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ।
সেতু নিয়ে মতবিনিময়
নারায়ণগঞ্জের বন্দর ও সদর উপজেলার মধ্যকার যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ করতে শীতলক্ষ্যা নদীর উপর নির্মাণাধীন বহুল কাংখিত কদমরসুল সেতুর কাজ বিঘ্নিত না করার দাবি উঠেছে। একইসাথে এই সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে জনদুর্ভোগ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখার কথা বলেছেন বক্তারা।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় নগরীর আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগারের পরীক্ষণ হলে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেন তারা।
নারায়ণগঞ্জ নাগরিক আন্দোলন আয়োজিত এ সভা বিকেল পাঁচটায় শুরু হয়ে তিনঘন্টা চলে। এতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, নাগরিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা অংশ নেন এবং তাদের অভিমত ব্যক্ত করেন।
স্বাগত বক্তব্যে নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক রফিউর রাব্বি বলেন, কদমরসুল সেতু নিয়ে বিভিন্ন মত তৈরি হয়েছে। এ কারণে এ সভার আয়োজন করা হয়েছে, যাতে সকলে তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন এবং একটি সুনির্দিষ্ট সমাধান যাতে বেরিয়ে আসে।
কদমরসুল সেতু প্রকল্প নিয়ে ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে আলোচনা করা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সেতুটির নকশায় পশ্চিমপাড়ের ঢালটি যেভাবে নামানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। এতে নগরীর বিদ্যমান যানজট আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা করেন তিনি।
এ সময় সেতুটির নকশায় কিছু পরিবর্তন আনলে এই সমাধান সম্ভব বলেও মন্তব্য করেন রাব্বি।
“বন্দরের সাথে শহরবাসীকে মুখোমুখি দাঁড় করানোর জন্য কেউ কেউ চেষ্টা করছেন। কিন্তু আমরা স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা সেতুটি হোক এটি অবশ্যই চাই কিন্তু সেতুটি যাতে নতুন করে জনদুর্ভোগ তৈরি না করে সেদিকে খেয়াল রেখে কাজ করতে হবে। যাতে দুই পাড়েন মানুষই উপকৃত হন। আইভী (সাবেক মেয়র) এই সেতুটি যখন করতে চেয়েছিলেন তখন শামীম ওসমান এটাকে আটকাতে দপ্তরগুলোতেও গিয়েছিল।”
তিনি আরও বলেন, “নারায়ণগঞ্জের সংকট আমাদের পীড়িত করে বলেই বিভিন্ন সময় আমরা এসব নিয়ে কাজ করেছি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা সফল হয়েছি। সম্মিলিত প্রচেষ্টাই এই সফলতা এনে দিয়েছে। আমরা চাই সেতুর কাজও যাতে বিঘ্নিত না হয় এবং একইসাথে এইটা বাস্তাবায়ন হলে কোনো দুর্ভোগও যাতে সৃষ্টি না হয়।”
সভায় অন্য বক্তারাও সেতুটির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে বলেন, “এটি শহর ও বন্দরের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন। সেতু মানুষের কাজে আসবে বলেই পরিকল্পনা করা হয়। পুরো সেতুটি নিয়ে কোনো আপত্তি নেই, কেবল পশ্চিমপাড়ের র্যামটি নিয়ে আপত্তি। পূর্বপাড়ে সেতুর কাজ চলমান রেখেই নকশায় কিছুটা পরিবর্তন আনা যায়।”
এ সেতুটির জন্য আগেও একটি নকশা করা হয়েছিল, প্রয়োজনে পুরোনো নকশাটিকেও আমলে নেওয়া যেতে পারে বলেও মত দেন অনেকে।
সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সভাপতি এবি সিদ্দিক, নারায়ণগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান মাসুম, নারায়ণগঞ্জ কলেজের অধ্যক্ষ ফজলুল হক রুমন রেজা, ইসলামী আন্দোলনের মহানগর শাখার সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলনের জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, এনসিপির কেন্দ্রীয় সংগঠক শওকত আলী ও আহমেদুর রহমান তনু, আমরা নারায়ণগঞ্জবাসী সংগঠনের সভাপতি নূরউদ্দিন আহমেদ, নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক দিপু, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি মনি সুপান্থ, সাবেক সভাপতি ভবানী শংকর রায়, জিয়াউল ইসলাম কাজল ও প্রদীপ ঘোষ বাবু, সাবেক কাউন্সিলর অসিত বরণ বিশ্বাস, মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি রিনা আহমেদ, কালিরবাজারের ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন নাগরিক আন্দোলনের নেতা ধীমান সাহা জুয়েল।
কদমরসুল সেতু সদর ও বন্দর উপজেলাকে সংযুক্ত করার কথা থাকলেও শীতলক্ষ্যার দুই পাড়ের মানুষের নিত্যদিনের যাতায়াতে এখনও কোনো সুফল আসেনি বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
২০১৬ সালে সিটি নির্বাচনকে ঘিরে প্রতিশ্রুতি দেন তৎকালীন মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী। ২০১৭ সালে সিটি করপোরেশন সেতুর পরিকল্পনা নেয় এবং কদমরসুল দরগাহের নামে নামকরণের সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৮ সালের অক্টোবরে একনেক সভায় প্রকল্পটি ৫৯০ কোটি টাকায় অনুমোদন পায় এবং ২০২২ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ধরা হয়। তবে রেলওয়ে, বিআইডব্লিউটিএ, খাদ্য মন্ত্রণালয় ও কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের জমি-সংক্রান্ত জটিলতার কারণে কাজ আটকে যায়।
দীর্ঘ ছয় বছর স্থবির থাকার পর ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩৫ কোটি টাকা, নকশায়ও পরিবর্তন আনা হয়। অবশেষে জটিলতা কাটিয়ে দরপত্র শেষে গত জুলাই মাসে পূর্বপাড়ে প্রকল্পক্ষেত্র প্রস্তুতের কাজ শুরু করে বাস্তবায়নকারী সংস্থা এলজিইডি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।