বন্দর সংবাদদাতা
বন্দর উপজেলার লাঙ্গলবন্দে ব্রহ্মপুত্র নদের তীরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মহাষ্টমী স্নানোৎসবে লাখো পুণ্যার্থীর ঢল নেমেছে। করোনার কারণে দুই বছর স্নানোৎসব না হওয়ায় এবার ১০ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম ঘটবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। শনিবার (৯ এপ্রিল) সকাল থেকে সরেজমিনে স্নান ঘাট ঘুরে দেখা যায়, এবার নদের ১৮টি ঘাটে স্নানোৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন স্পটে লাগানো হয়েছে সিসিটিভি ক্যামেরা। বসানো হয়েছে একাধিক ওয়াচ টাওয়ার।জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিটি ঘাটে রয়েছে পুলিশের টহল টিম। এছাড়াও ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সর সদস্যরা নদী ও সড়কে অবস্থান করছেন। এছাড়াও মোবাইল কোর্ট ও সাদা পোশাকে পুলিশ টহল দিচ্ছে। পুণ্যার্থীরা ফুল, বেলপাতা, ধান, দুর্বা, হরিতকি, ডাব, আম্রপল্লব, ফলসহ স্নান করতে ব্রহ্মপুত্র নদে নামছেন। হে মহাভাগ ব্রহ্মপুত্র, হে লোহিত্য আমার পাপ হরণ কর মন্ত্র পাঠ করে ডুব দিচ্ছেন। এছাড়াও স্নানঘাটগুলোতে হচ্ছে বাসন্তী পূজা। শুক্রবার (৮ এপ্রিল) রাত ৯টা ১১ মিনিট ৫৭ সেকেন্ডে স্নান লগ্ন শুরু হয়। আর শেষ হয় শনিবার রাত ১১টা ৮ মিনিট ৪৭ সেকেন্ডে। এসময়ে মধ্যে লাঙ্গলবন্দের আয়োজিত ঘাটগুলোতে তীর্থযাত্রীরা স্নান করেন। এদিকে স্নানোৎসবকে কেন্দ্র করে ৩ কিলোমিটার এলাকায় নদীর তীরে বসেছে মেলা। মেলায় চুড়ি, ফিতা, আলতা থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের শীতল পাটি, মাটির তৈরি বিভিন্ন তৈজসপত্র, খেলনা, একতারা, ঢোল বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও রয়েছে আছে নিমকি, পিঠা, মিষ্টি, সন্দেশসহ রকমারি খাবারের দোকান। লাঙ্গলবন্দ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি ষড়জ কুমার সাহা বলেন, এ বছর ৮-১০ লাখ পুণ্যার্থীর সমাগম হয়েছে। দুই বছর করোনা মহামারিতে বন্ধ থাকা ও সপ্তাহের ছুটির দিন হওয়ায় ভক্ত সমাগম বেশি হয়েছে। এই পুণ্যার্থীদের জন্য ৪০টি সেবাক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। প্রসাদ, জলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের সেবায় ৩০০ স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে। নিরাপত্তায় পুলিশ, র্যাব, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারা আছেন। সিভিল সার্জনের পক্ষথেকে মেডিক্যাল ক্যাম্পস্থাপন করা হয়েছে। এছাড়াও বিআইডবিøউটিএ, ফায়ার সার্ভিসসহ অন্য প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠানগুলোও আছে। নারায়ণগঞ্জ পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল বলেন, এখানে ১৫০০ এর অধিক পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে। ৩০টি সিসিটিভি ক্যামেরা রয়েছে। ওয়াচ টাওয়ারসহ সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ টহল দিচ্ছে। এছাড়াও নৌ-পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, কোস্টগার্ডও কাজ করছে।
অবৈধ মেলা
বন্দরের লাঙ্গলবন্দ স্নানোৎসবে এবার যানজট নিয়ন্ত্রণসহ সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেলা সম্পূর্ণ নিষেধ করা হলেও পুরো এলাকাজুড়েই বসেছে মেলা। অবৈধভাবে টাকা নিয়ে এসব মেলা বসিয়েছে একটি সিন্ডিকেট। শনিবার (৯ এপ্রিল) লাঙ্গলবন্দ এলাকা ঘুরে এসব দৃশ্য দেখা গেছে। মেলায় দোকান বসানো ব্যক্তিদের সাথে কথা বলে জানা গেছে ছোট দোকান ১ হাজার করে এবং বড় দোকান আরো বেশি করে টাকা নিয়ে বসতে দেয়া হয়েছে। তবে সড়কে বসতে না পেরে এবার সড়কের পাশে সরকারি মালামালের উপর বসেছে এসব দোকান। তবে পুলিশ বলছে, মেলা সড়কে বসেনি, সড়ক ফাঁকা আছে। সড়ক কোন ধরনের দোকান বসলে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হতো। এবার মেলায় ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন জেলা থেকে লাখ লাখ পূর্ণার্থী স্নানোৎসবে এসেছেন। এদিকে মেলার কারণে সড়কে ভিড় লেগে থাকায় এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এ বছর যানজটের কথা বিবেচনা করেই স্থানীয় সংসদ সদস্য একেএম সেলিম ওসমান, উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন মেলা বসানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। মেলায় দোকান বসানো একাধিক ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, স্থানীয় মাকসুদ চেয়ারম্যানের নাম করে একটি সিন্ডিকেট দোকানিদের কাছ থেকে টাকা তুলে তাদের মেলা বসানোর সুযোগ করে দিয়েছে। বছরের এই একটি দিন এখানে ব্যবসা হয়, যদি ১ হাজার টাকা করে তারা নেয়ও তাতেও কোন সমস্যা নেই। জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) জায়েদুল আলম জানান, আমরা তো কোন মেলার অনুমতি দেইনি। কর্তৃপক্ষ পানি বা প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রয়ের জন্য কিছু দোকান দিয়েছে। তবে সড়কে কোন অবৈধ দোকান বা মেলা বসেনি। তবে ১০ লাখ লোক একটি স্থানে আসলে সেখানেতো কিছুটা ভিড় হবেই।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।