নিজস্ব সংবাদদাতা
নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ক্লাস ও মাঠে দাঁড় করিয়ে রেখে বহিরাগতদের নিয়ে স্কুলের মাঠে এক শিক্ষকের রাজকীয়ভাবে জন্মদিন পালন করা হয়েছে। এসময় অভিভাবকদের গেটের বাইরে অপেক্ষা করে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যেও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। জানা গেছে, সোমবার (১৬ মে) নারায়ণগঞ্জ হাই স্কুল এন্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষক সাথী চক্রবর্তী এবং বাংলা বিভাগের শিক্ষক নিবেদিতা সরকারের জন্মদিন ছিল। স্কুল চলাকালীন সময়ে ৩ শিক্ষক মাহাবুবুর রহমান,বিপুল সরকার এবং সুমন সাহা শতাধিক বহিরাগতের সাথে নিয়ে মাইকে স্কুলের নারী শিক্ষক সাথী চক্রবর্তীর জন্মদিনের ঘোষণা দিয়ে সকল শিক্ষকদের মাঠে আসার জন্য এবং শিক্ষার্থীদের মাঠে ও ক্লাসে অবস্থান করার জন্য নির্দেশ দেন। এসময় স্কুলের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের জন্য ব্যবহৃত টেবিল জাতীয় পতাকা স্ট্যান্ডে এনে কেক কেটে এবং ফুল দিয়ে রাজকীয়ভাবে জন্মদিন পালন করা হয়। সাথী সাহার জন্মদিনের অনুষ্ঠানের কারণে প্রায় ৩০মিনিট ক্লাশের কার্যক্রম বন্ধ ছিল। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করে বলেন, একই দিনে ২ জন শিক্ষকের জন্মদিন থাকলেও অপর শিক্ষক নিবেদিতা সরকারের জন্মদিনের জন্য কোন আয়োজন না করে একজন বিশেষ শিক্ষকের জন্মদিনের আয়োজন করে সাথী সাহাকে নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য একটি গ্রæপ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।এদিকে সাথী সাহার জন্মদিন উপলক্ষে শতাধিক বহিরাগতকে স্কুলে প্রবেশ করিয়ে পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। শিক্ষার্থীরা জানান, সাথী মিসের জন্মদিনকে কেন্দ্র করে স্কুলে সারাদিন কোন ক্লাস হয়নি। এব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মাহমদুল হাসান ভুইয়া জানান, জন্মদিন পালনের বিষয়টি আমার জানা ছিলনা।স্কুলের ভেতরে কিভাবে এধরনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। পরিচালনা পরিষদের অভিভাবক সদস্য ওয়াহিদ সাদাত বাবু জানান, এভাবে স্কুলে বাইরের লোকজন ভেতরে এনে জন্মদিন পালনের কোন প্রচলন নেই। তিনি জানান, গভর্ণিং বডির সভাপতির প্রশ্রয়ে সাথী চক্রবর্তীসহ কিছু শিক্ষক স্কুলের ভিতরে নানান অনিয়ম করছে। আমি এ ধরনের ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। পরিচালনা পরিষদের অপর সদস্য সরকার আলম জানান, টিচার রুমের ভেতরে নিজেদের মধ্যে জন্মদিনের অনুষ্ঠান করলে আমাদের আপত্তি থাকার কথা না। কিন্তু মাঠে বহিরাগতদের নিয়ে কয়েকজন শিক্ষক সাথী চক্রবর্তীর জন্মদিন পালনের নামে ছাত্রদের আটকে রেখে যে অনুষ্ঠান আয়োজন করেছে একজন অভিভাবক সদস্য হিসেবে আমি এর নিন্দা জ্ঞাপন করছি। তিনি বলেন, স্কুল কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কোন প্রকার অনুষ্ঠান আয়োজন করা এটি প্রশাসনিক ব্যর্থতা।প্রধান শিক্ষকের এ বিষয়টি দেখা উচিৎ ছিল। গভর্ণিং বডির সদস্য আবদুস সালাম জানান, তিনি ফেসবুকের মাধ্যমে অবহিত হওয়ার পর প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছেন। প্রধান শিক্ষক এব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে তাকে জানিয়েছেন। তবে এ বিষয়টাকে প্রধান শিক্ষকের ব্যর্থতা বলে তিনি মনে করেন। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবু তালেব জানান,এ ব্যাপারে আমি প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলেছি। তিনি কিছুই জানেন না বলে আমাকে জানিয়েছেন। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। যদি স্কুল চলাকালীন সময় এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন করে শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ক্ষতি করে থাকে তাহলে এটা অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
এব্যাপারে একাধিকবার গভর্ণিং বডির সভাপতি চন্দন শীলের ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।