Logo
HEL [tta_listen_btn]

স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে প্রেমিককে খুন

স্বামী ঠান্ডু মোল্লা (৩৭) প্রবাসে থাকায় ময়মনসিংহের যুবক শহিদুল ইসলামের (৩২) সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে গৃহবধূ সালমা খাতুনের (৩২)। দেশে আসার পর বিষয়টি স্বামী ঠান্ডু মোল্লা জেনে যাওয়ায় সালমা সংসার টিকিয়ে রাখতে তাকে সঙ্গে করে অন্য একজনের সহায়তায় পরিকল্পিতভাবে খুন করেন প্রেমিক শহিদুলকে।

পাবনার সাঁথিয়ায় তিন বছর আগে সংঘটিত এই চাঞ্চল্যকর খুনের ঘটনার কুলকিনারা করতে পারেনি থানা পুলিশ। সিআইডিও কোনো আসামি গ্রেফতার করতে না পেরে ঘটনাটি ভিন্নখাতে চালিয়ে দায়সারা চার্জশিট প্রদান করে। অবশেষে তিন বছর পর পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) এই চাঞ্চল্যকর খুনের রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) খুনের সঙ্গে জড়িত অন্যতম প্রধান আসামি হায়াত আলীকে (২২) গ্রেফতার করা হয়েছে। পিবিআই পাবনার সদস্যরা হায়াত আলীকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে। হায়াত আলী সিরাজগঞ্জ জেলার শাহাজাদপুর উপজেলার করশালিকা পুরানপাড়া গ্রামের গেদু শেখের ছেলে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন- একই গ্রামের মৃত রহমান মোল্লার ছেলে প্রবাসী ঠান্ডু মোল্লা ও তার স্ত্রী মোছা. সালমা খাতুন। খুনের শিকার যুবক শহিদুল ইসলাম ময়মনসিংহ জেলার ধুবাউড়া থানার বাকপাড়া বাজার চারুয়াপাড়া গ্রামের মৃত আব্দুল বারেকের ছেলে। প্রবাসী ঠান্ডুর স্ত্রী সালমা খাতুন প্রেমিক শহিদুলের পাশের গ্রাম গিলাগড়া গ্রামের সুরুজ আলীর মেয়ে।

পিবিআই পাবনা জেলার প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন কান্তি চৌধুরী জানান, কয়েক বছর আগে ঠান্ডু মোল্লা তার স্ত্রী সালমা খাতুনকে ময়মনসিংহে বাবার বাড়িতে রেখে ওমানে যান। এ সময় শহিদুল ইসলামের সঙ্গে তার পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিষয়টি তার ওমান প্রবাসী স্বামী জানার পর ক্ষুদ্ধ হন। এরপর দেশে ফিরে এসে তিনি স্ত্রীর কাছে সব জেনে শহিদুলকেই হত্যার পরিকল্পনা করেন। তখন সালমা সংসার টেকাতে তার স্বামীকে সহযোগিতা করেন।

এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর শহিদুল ইসলামকে ময়মনসিংহ থেকে সালমা কৌশলে পাবনার সাঁথিয়ায় নিয়ে আসেন। সন্ধ্যায় সালমা সাঁথিয়ার চতুর বাজারের এক জায়গায় তার সঙ্গে গল্প করতে থাকেন। তখন পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক শহিদুলকে হায়াত আলী ও ঠান্ডু মোল্লা কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে পালিয়ে যান। ১৭ অক্টোবর শহিদুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

তিনি আরও জানান, এ ঘটনার পর নিহতের ভাই পাহাড়ী রাজু সাঁথিয়া থানায় মামলা করেন। সাঁথিয়া থানা পুলিশ মামলার কুলকিনারা করতে পারেনি। পরে সাঁথিয়া থানা হতে মামলাটির তদন্তভার পাবনা জেলা সিআইডি গ্রহণ করে। সিআইডি মামলার তিনজন আসামিকে অব্যাহতি দিয়ে আসামি হায়াত আলী ও ঠান্ডু মোল্লাকে পলাতক দেখিয়ে আদালতে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। বাদীপক্ষ এতে সন্তুষ্ট হতে না পেরে নারাজি দিলে আদালত মামলার পুনরায় তদন্তভার পাবনা জেলা পিবিআইয়ের ওপর অর্পণ করেন।

পিবিআইয়ের পাবনা জেলা প্রধান মামলাটি তদন্তের নির্দেশনা পেয়ে এসআই মো. সবুজ আলীকে তদন্তের দায়িত্ব দেন। তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সবুজ আলী কিছুদিনের মধ্যেই তথ্য-প্রযুক্তি সহায়তায় মামলার রহস্য উদঘাটন করতে সক্ষম হন।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. সবুজ আলী জানান, হায়াত আলী জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন ঘটনার পর থেকেই আসামি ঠান্ডু মোল্লা বিদেশে পালিয়ে যান। তিনি বর্তমানে ওমানে পলাতক অবস্থায় রয়েছেন। গ্রেফতার হায়াত আলীকে আদালতে সোর্পদ করা হয়েছে। তিনি বিজ্ঞ আদালতে শহিদুল ইসলামকে হত্যা করার ঘটনায় নিজের সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করেছেন।

এসআই সবুজ আলী বলেন, অন্য আসামিদের শিগগিরই গ্রেফতার করা যাবে।

উল্লেখ্য, মামলার বাদী, এজাহার ও সিআইডি পাবনা জেলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল- ঠান্ডু মোল্লা শহিদুল ইসলামকে ৪ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। টাকা ফেরত না দেয়ায় এ হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com