ঢাকা, ৩০ মার্চ- ২৫শে মার্চ দীর্ঘ ২৫ মাস পর সাময়িকভাবে মুক্তি পেয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। বেগম খালেদা জিয়া ৬ মাসের জন্যে মুক্তি পেয়েছেন এবং ফৌজদারি কার্যবিধি ৪০১ ধারা প্রয়োগ করে এক নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে তাঁর শাস্তি স্থগিত করেছে সরকার। এই মুক্তি কি কেবল মানবিক কারণে মুক্তি নাকি এর পেছনে কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে বা রাজনৈতিক সমাঝোতার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি পেয়েছেন কিনা এই নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান আলাপ-আলোচনা চলছে।
তবে বেগম খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে একটি চমকপ্রদ খবর পাওয়া গেছে। বর্তমানে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকা বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি প্রস্তুত হচ্ছে বলে জানা গেছে এবং এই বিবৃতি হবে চমকপ্রদ এবং বাংলাদেশের রাজনীতিতে এই বিবৃতিটি একটি বিরল, ব্যতিক্রমী এবং রাজনৈতিক গতি প্রকৃতিকে পাল্টে দেয়া বিবৃতি হবে বলেও বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই বিবৃতিটা বেগম খালেদা জিয়া হোম কোয়ারেন্টাইন শেষেই প্রকাশ করবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি অকুণ্ঠ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করবেন তাঁকে সাময়িকভাবে মুক্তি দেয়ার জন্য এবং একইভাবে তিনি সরকার যেভাবে উন্নয়ন, অগ্রগতির পথে নিয়ে যাচ্ছে তাঁর-ও প্রশংসা করবেন। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক সময়ে করোনা ঝুঁকি মোকাবেলা করা এবং অন্যান্য অগ্রগতি এগিয়ে নেবার জন্য একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাবে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো বলছে।
অর্থাৎ এর মাধ্যমে বিএনপি-আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের বৈরিতা এবং বিপরীত অবস্থান- সেই অবস্থান ঘুচবে বলেও মনে করছেন দায়িত্বশীল একাধিক মহল।
সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, যেভাবে বিএনপিকে অন্ধকারে রেখে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির ব্যবস্থা করা হয়েছিল, ঠিক একইভাবে বিএনপি নেতৃবৃন্দকে আড়ালে রেখেই বেগম খালেদা জিয়ার এই বিবৃতি তৈরি করা হচ্ছে। জানা গেছে বেগম খালেদা জিয়ার এই বিবৃতি তৈরির পেছনে কাজ করছেন বেগম খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাইদ এস্কান্দার, তাঁর বোন এবং দুইজন বিএনপিপন্থি বুদ্ধিজীবী। তাঁরা বিএনপিকে সম্পূর্ণ আড়ালে রেখে এই বিবৃতি প্রস্তুত করেছে। ইতিমধ্যে বেগম খালেদা জিয়া বিবৃতিটা দেখেছেন এবং নীতিগতভাবে অনুমোদন দিয়েছেন।
একটি সূত্র বলছে যে, বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারের সাথে বেগম জিয়া পরিবারের দীর্ঘ আলাপ-আলোচনা এবং সমাঝোতা প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়েছিল এবং এই সমাঝোতা প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবেই বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের তিনজন সদস্য শেখ হাসিনার সাথে তাঁর গণভবনের বাসায় দেখা করেন।
জানা গেছে যে, এই সমাঝোতার অন্যতম শর্ত ছিল সহাবস্থানের রাজনীতি এবং বিএনপি সরকারের প্রতিপক্ষ হিসেবে নয়, সমালোচক হিসেবে নয় বরং সরকারের সাথে মিলেমিশে কাজ করবে। এই বিবৃতিতে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। যারা বিবৃতি প্রস্তুত করছেন, তাঁদের মাধ্যমে জানা গেছে যে বিবৃতিতে তিনটি বিষয় রয়েছে।
প্রথমত, বেগম খালেদা জিয়া ধন্যবাদ জানাবেন তাঁকে মুক্ত করার জন্য।
দ্বিতীয়ত, তিনি সরকারকে করোনাভাইরাস মোকাবেলার করার জন্য সহায়তা করা এবং সকলে মিলে যেন কাজ করে এই জন্য বিএনপি নেতাবৃন্দদের প্রতি আহ্বান জানাবেন এবং তৃতীয়ত তিনি মৌলিক কিছুবিষয়ে জাতীয় ঐক্যমত গঠন করে একযোগে কাজ করার জন্য আহ্বান জানাবেন।
তবে বিএনপি নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ করে জানা গেছে যে, তাঁরা এই বিবৃতির ব্যাপারে কিছুই জানেন না। অবশ্য বিএনপির একজন নেতা বলেছেন যে, বেগম খালেদা জিয়ার যে মুক্তি হবে সেটা আইনমন্ত্রীর বক্তব্যের আগে জানতাম না এবং তাঁর পরিবারই এটা করেছে। এখন এরকম বিবৃতি যদি তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকে দেয়া হয় তাহলেও তাঁদের কিছু করার নেই।
অবশ্য বিবৃতিটি সমাঝোতার অংশ হিসেবে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সাথে সাথেই দেয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত হয় এবং সেকারণে বিবৃতিটি তখন দেয়া হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, আগামী পহেলা বৈশাখ বা তাঁর আগে আগে বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে বিবৃতিটি গণমাধ্যমে প্রচার করা হবে।
সূত্র: বাংলা ইনসাইডার
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।