Logo
HEL [tta_listen_btn]

আড়াইহাজারে থমকে গেছে পাঁচ শতাধিক বেনারশি শ্রমিকের উপার্জন

আড়াইহাজারে থমকে গেছে পাঁচ শতাধিক বেনারশি শ্রমিকের উপার্জন

এম এ হাকিম ভূঁইয়া:
নিরব প্রাণঘাতি করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে আড়াইহাজারে বন্ধ হয়ে গেছে বেনারশি শাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান। এরই সাথে থমকে গেছে এই শিল্পে কর্মরত প্রায় পাঁচ শতাধিক শ্রমিকের উপার্জন। স্থানীয় ফতেপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের লতবদী এলাকায় বিপুল সংখ্যক গড়ে উঠা প্রতিষ্ঠানে প্রস্ততকৃত শাড়ি বিক্রি হচ্ছিল ঢাকার মিরপুর ১০ নাম্বারে বেনারশি পল্লীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। করোনার সংক্রমণের নিরব আতঙ্কে তছনছ এই শিল্পের মহাকর্মযজ্ঞ। বেকার হয়ে পড়েছেন বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। করোনার আতঙ্ক ছাপিয়ে তাদের মধ্যে এখন ক্ষুধার আতঙ্ক। সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো পক্ষই ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে আসেনি অসহায় এই মানুষগুলোর কাছে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, শ্রমিক পরিবারগুলোতে করা হচ্ছে মানবেতর জীবনযাপন। দিন যতই যাচ্ছে অভাব তাদের গ্রাস করছে। বিভিন্ন সময় নানা প্রতিকূল পরিবেশও তারা মোকাবেলা করে আসছিলেন। কিন্তু বর্তমান সময়ের মতো এমন কঠিন ও ভয়ানক পরিস্থিতি তারা এর আগে কখনোই দেখিনি। এমনিতেই দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্প ধুকে ধুকে চলছিল। এর ওপর করোনার প্রভাব। যেন মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। নানা প্রতিবন্ধকতার মাঝেও এক প্রকার হেঁসেখেলেই চলতো শ্রমিকদের সংসার। কিন্ত নিরব ঘাতক করোনার আতঙ্কে হঠ্যাৎ করেই যেন সব পাল্টে দিয়েছে। মালিক কিংবা শ্রমিক; সবার কপালেই চিন্তারভাজ। প্রতিটি বাড়িতেই আছে ১০ থেকে ১৫টি করে তাঁত। ভাইরাস সংক্রমণের চেয়ে ক্ষুধার আতঙ্কে ভোগছেন তারা। তবে এরই মধ্যে মাত্র ২৫০ জনের একটি তালিকা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে; কেবল তারাই তালিকায় অন্তরভুক্ত হয়েছেন। মাত্র কয়েক দিন আগেও কারখানাগুলোতে দিনভর মহাকর্মযজ্ঞে ছিল মুখরিত। এখন শুধুই নিস্তদ্ধ এক নিরবতা। দূর থেকে ভেসে আসতো হ্যান্ড লুমের খুটখাট শব্দ। এখন নেই কোনো কর্মচঞ্চলতা। নেই চীরচেনা সেই শব্দ। বিরাজ করছে এক থমথমে পরিস্থিতি। সবার মাঝেই বিরাজ করছে অজানা এক আতঙ্ক। প্রতিষ্ঠানগুলোতে ঝুলছে তালা। শ্রমিকদের পক্ষ থেকে অনেকেই অভিযোগ করেন, এই পর্যন্ত সরকার কিংবা বেসরকারি কোনো পক্ষই খাদ্য সহযোগিতা নিয়ে তাদের কাছে আসেনি। কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে পারছে না অনেকেই। লতবদী এলাকায় বেনারশি শাড়ি তৈরি প্রতিষ্ঠানের মালিক শহিদউল্যাহ বলেন, ‘আমার প্রতিষ্ঠানে ১০টি হ্যান্ডলুম আছে। ১৫ বছর ধরে প্রতিষ্ঠানে বেনারশি শাড়ি তৈরি করে আসছি। তাতে ১২জন নারী-পরুষ শ্রমিক কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে যাচ্ছেন। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে প্রতিষ্ঠান বন্ধ। তিনি নিজেও এখন চিন্তিত। তার চোখে মুখেও হত্যাশার ছাপ। কিভাবে চলবে সংসার। কতদিনই বা চলবে এমন পরিস্থিতি।’ এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, বন্ধ রাখা হয়েছে এলাকায় ছানাউল্যাহ, আমির হোসেন, মফিজুলসহ আরো অনেকের প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক ছালাউদ্দিন বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও সাপ্তাহে ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা রোজগার করতে পারতাম। এদিয়েই সংসার খরচ করে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করা যেতো। এখন পরিবারের খাবারই জোগার করতে পারি না। এইভাবেই বা চলবে কতদিন।’ তিনি আরো বলেন, আমরা মতো অনেকেই পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে যাচ্ছেন। কিন্তু এই পর্যন্ত সরকার বা কোনো ব্যক্তি কোনো পক্ষ থেকেই সহযোগিতা আমি সহ এলাকার অনেক শ্রমিকই পায়নি। স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধিও আমাদের খোঁজখবর নিতে আসেনি। এই ব্যাপারে জানতে চাইলে ফতেপুর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের সাধারণ সদস্য সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের ভোটার আইডি কার্ড আছে, এমন ২৫০ জনের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকার বাইরে যারা থাকবেন, তাদের ব্যাপারটি চেয়ারম্যানকে অবহিত করা হবে


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com