বিশেষ সংবাদদাতা
করোনা মহামারিকালে নারায়ণগঞ্জে মরার উপর খড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে ছেলেমেয়ের স্কুল বেতন পরিশোধের বিষয়টি। এমনিতেই গত তিন মাস যাবত সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ, তার উপর করোনার প্রকোপে নাজেহাল মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা। এমতাবস্থায় নারায়ণগঞ্জের প্রায় সকল বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষ গত চার মাসের বেতন পরিশোধের জন্যে অভিবাবকদের ফোন করছে এবং ম্যাসেজ পাঠাচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগী অভিভাবক সমাজ। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি স্কুলগুলোর মধ্যে আইডিয়াল স্কুল, বেইলী স্কুল, আদর্শ স্কুল, চেঞ্জেস স্কুল, নিউক্লিয়াস স্কুল, প্লে পেইন স্কুলসহ বেশীরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ গত ফেব্রুয়ারী, মার্চ, এপ্রিল ও মে মাসের বেতনের জন্যে অভিভাবকদের সাথে যোগাযোগ করছে। কাউকে মোবাইলে ফোন করে আবার কাউকে ম্যাসেজ পাঠিয়ে বেতন পরিশোধ করতে বলছে। এতে করে বেকায়দায় পরেছেন বেশীরভাগ অভিভাবক। করোনার কারণে অনেকের আয় রোজগার থমকে আছে, ঠিক মতো সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এ অবস্থায় চার মাসের বেতন শোধ করতে হলে তাদেরকে ধার দেনা করতে হবে। তাই এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন তারা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়াও জানিয়েছেন অনেক অভিভাবক। নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়ায় অবস্থিত বেইলী স্কুলের চতুর্থ শ্রেণির এক ছাত্রের অভিভাবক বলেন, বেতন চাওয়া হয়েছে, তবে এ বিষয়ে বেশী কিছু বলতে পারবো না, কারণ আমার ছেলে এ স্কুলে পড়ে। আমি স্কুলের বিপক্ষে বক্তব্য দিলে আমার ছেলেকে ঠিক মতো নাও পড়াতে পারে বা নাম্বার কম দিতে পারে। তবে নাম প্রকাশ না করলে বলবো, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেতন দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব নয়। আদর্শ স্কুলের জনৈক অভিভাবকও একই সুরে বলেন, স্কুল থেকে ম্যাসেজ পেয়েছি। ঠিক মতো সংসারইতো চালাতে পারছি না, বেতন দেবো কিভাবে। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর ভাই আহমদ আলী রেজা উজ্জল পরিচালিত প্লে পেইন স্কুলের একজন অভিভাবক ক্ষেভের সঙ্গে বলেন, স্কুল থেকে ফোন দিয়ে বলা হয়েছে পরীক্ষার শীট নিয়ে যেতে। শীটের ৫০ টাকা দিতে হবে না তবে চার মাসের বেতন পরিশোধ করতে হবে। আমার দুই সন্তান পড়ে সে স্কুলে। প্রতি মাসের বেতন ৬০০ টাকা। তাদের দুই জনের চার মাসের বেতন ৪৮০০ টাকা এখন আমার পক্ষে দেয়া অসম্ভব। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামরা করছি। তবে এ বিষয়ে অভিভাবকদের শুধুমাত্র জানানো হয়েছে, কোন প্রকার প্রেশার দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন আদর্শ স্কুল নারায়ণগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আজিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা অভিভাবদের জানিয়েছি যাদের সামর্থ আছে তারা যেনো বেতন পরিশোধ করেন। কারণ স্কুলের কারেন্ট বিল এসেছে ৭৫ হাজার টাকা, ষ্টাফদের বেতন আছে, যাবতীয় খরচ মেটানোর জন্যে যারা পারবে শুধু তাদের কাছ থেকে বেতন চাওয়া হয়েছে। তবে বেতন দিতে কোন প্রকান চাপ প্রয়োগ বা বাধ্য করা হচ্ছে না। এ বিষয়ে জানতে নারায়ণগঞ্জের জেলা শিক্ষা অফিসার শরিফুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে বলেন, সরকারি নির্দেশনা হলো দাপ্তরিক কাজ পরিচালনার জন্যে স্কুলের অফিস খোলা রাখা, বেতন ভাতা নেওয়ার কথা না। বিষয়টি নিয়ে আমি জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।