মোঃ সাহাব উদ্দিন কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা :
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কুতুবজোম এলাকায় ড্রেজার বসিয়ে ‘ঘটিভাঙ্গা খাল’ থেকে বালি উত্তোলনের অভিযোগ পাওয়া গেছে।এতে সেতুসহ পুরো একটি গ্রাম বিলীন হয়ে যেতে পারে এমন আতঙ্কে রয়েছেন প্রায় ৩০ হাজার মানুষ। তবে বালু উত্তোলনকারীদের দাবি, উন্নয়ন কাজে ব্যবহার করতেই বালি উত্তোলন করছেন তারা। এনিয়ে অসন্তোষ গ্রামবাসী।স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক মাস যাবত একটি প্রভাবশালী মহল ঘটিভাঙ্গা খালের তিনপাশে অত্যাধুনিক ড্রেজার মেশিন বসিয়ে অবৈধভাবে বালি উত্তোলন করছেন। স্থানীয়দের আপত্তি সত্ত্বেও দিনরাত বালি উত্তোলন করছে এ সিন্ডিকেটটি। গ্রামের পার্শ্ববর্তী খাল থেকে বালি উত্তোলন করায় এলাকার পরিবেশ, সেতু ও গ্রামের বিভিন্ন স্থাপনা ধসে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।ইতোমধ্যে প্রতিকার পেতে এলাকাবাসীরা আবেদন করেছেন বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বোর্ড এর চেয়ারম্যান ও নির্বাহী চেয়ারম্যান, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের মুখ্য সচিব, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার, কক্সবাজার-২ আসনের স্থানীয় সংসদ সদস্য ও জেলা প্রশাসকের কাছে।এ ব্যাপারে ঘটিভাঙ্গার সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রবিউল আলম ও ইউপি সদস্য নুরুল আমিন খোকাসহ এলাকার আরো কয়েকজন বাসিন্দা জানান, প্রভাবশালী সিন্ডিকেটকে বালি উত্তোলনে নিষেধ করলেও তারা তা না মেনে দিনরাত বিরামহীনভাবে বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। ফলে খালের সেতুসহ তীরবর্তী গ্রামের শত শত মানুষের বাড়িঘর হুমকির মুখে পড়েছে। এমনকি এভাবে বালি উত্তোলন প্রক্রিয়া চলতে থাকলে অচিরেই যেকোন মুহুর্তে পুরো গ্রাম ধসে তলিয়েও যেতে পারে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে বালি উত্তোলন নীতিমালা অনুযায়ী যন্ত্রচালিত মেশিন দ্বারা ড্রেজিং পদ্ধতিতে নদী বা খালের তলদেশ থেকে বালি উত্তোলন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এছাড়াও সেতু, কালভার্ট, রেললাইনসহ মূল্যবান স্থাপনার এক কিলোমিটারের মধ্যে বালি উত্তোলন করা সম্পূর্ণ বেআইনি। অথচ এক্ষেত্রে বালিদস্যুরা সরকারি ওই আইন অমান্য করে ড্রেজার মেশিন দিয়ে অবৈধভাবে খাল থেকে বালি উত্তোলন করছেন।জানা যায়, বর্তমান সরকার কক্সবাজারকে একটি ‘উন্নতমানের বিশেষ’ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং পরিপূর্ণ পর্যটন নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে আলাদা নজর দিয়েছেন। সরকারের এই উন্নয়নের রূপকল্প বাস্তবায়নে কক্সবাজারে ২৫টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এতে ঘটিভাঙ্গাবাসীও দেশরত্ব প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন।কেননা ২০১৬ সালের ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা’র) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী’র নেতৃত্বে ১২টি মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ কক্সবাজার সফর করে মহেশখালী দ্বীপ থেকে টেকনাফ পর্যন্ত সরেজমিন লে-আউট প্ল্যান প্রণয়ন করেন।পাশাপাশি কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার ছোট মহেশখালী, উত্তর নলবিলা, ঘটিভাঙ্গা, সোনাদিয়া, কুতুবজোম ও ধলঘাটায় ৪টি অর্থনৈতিক অঞ্চল তৈরিতে সরকারের অনুমোদন পায়। এতে উল্লেখ রয়েছে, ঘটিভাঙ্গার অদূরে গড়ে তোলা হবে কক্সবাজার ফ্রি ট্রেড জোন। সোনাদিয়ায় ৯৪৬৭ একর জমির উপর গড়ে তোলা হবে ইকো ট্যুরিজম পার্ক। এটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ শুরু করেছে অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (বেজা)।সরকারী তথ্যমতে, হামিদরদিয়া মৌজায় (৮৪২.৮১ একর), কুতুবজোম মৌজায় (২২৮৩.৩৩ একর), ঘটিভাঙ্গা মৌজায় (৮৬৫৮.৬৪ একর), বিএস খাস (জরিপ বিহীন) ১৪৮৪.৭৪ একর জমি চর ভরাট করার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। কিন্তু ঘটিভাঙ্গা গ্রামের দক্ষিণে ১০০ গজ সীমানা সংলগ্ন খাল থেকে বালি উত্তোলন করায় এলাকাবাসীর আপত্তি আসে। এতে ঘটিভাঙ্গা গ্রামের ৩০ হাজারেরও অধিক নারী পুরুষ ভিটেবাড়ি হারানোর আশঙ্কা করছেন। যদিও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল আইন, ২০১০ এ রয়েছে এলাকার ক্ষতি করে উন্নয়ন প্রকল্প স্থাপন করা হবে না। গ্রামবাসীরা আরো জানান, সরকার যেখানে ‘শেখ হাসিনা আশ্রয়ণ প্রকল্প’ গড়ে দরিদ্রদের গুচ্ছগ্রাম তৈরি করছেন। সেখানে আরেকটি গ্রাম বিলীন হোক তা কখনো চাইবে না।এলাকাবাসীরা জানান, কিছু অতি উৎসাহী বিতর্কিত ব্যক্তি বেজার সাব ঠিকাদার পরিচয়ে গ্রাম সংলগ্ন ঘটিভাঙ্গা খাল থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালি উত্তোলন করছেন। যাতে সরকারের ভাবমূর্তি বা সুনাম নষ্ট হয়। বিষয়টি তদন্ত করে দেখার প্রয়োজন বলে মনে করছেন সচেতন মহল। পাশাপাশি বেজার বিশেষজ্ঞ টিমের ঘটনাস্থল পরিদর্শনসহ জনস্বার্থে বালি উত্তোলন প্রক্রিয়া বন্ধ রেখে অন্যত্র স্থাপনেরও দাবি তুলেছেন গ্রামবাসী।এ বিষয়ে একাধিকবার স্থানীয় সংসদ সদস্য (কক্সবাজার-২) আশেক উল্লাহ রফিক এমপি’র মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলেও ফোন রিসিভ না করায় কোন মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে ফোন একবার রিসিভ হলেও অপরপ্রান্তে থেকে এক যুবক জানান এমপি সাহেব ব্যস্ত রয়েছেন।জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘বিষয়টি আমি শোনেছি। এ ব্যাপারে আমরা সিদ্বান্ত নিচ্ছি। এলাকার ক্ষতি হয় এমন কিছু হবে না। সেদিকে প্রশাসনের নজর রয়েছে।’এ বিষয়ে বালি উত্তোলনকারী ঠিকাদার পরিচয় দেওয়া মো. শাহাদাত বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। বালু উত্তোলনের কাজের সাথে আমি সম্পৃক্ত না। আর ঐ কাজের ঠিকাদার আমি করিনা। তাহলে অন্য জায়গা থেকে বালি আনার সরকারিভাবে বরাদ্দ থাকা স্বত্ত্বেও ঘটিভাঙ্গা থেকে বালু উত্তোলনে আপনার নাম আসছে কেন; জানতে চাইলে তার কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি উক্ত ঠিকাদার।মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জামিরুল ইসলাম জানান, গ্রামবাসীর অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে বালি তোলা আপাতত বন্ধ রাখতে বলেছিলাম। এখন আবার চালু করছে কিনা জানিনা। যেহেতু আমার কাছ থেকে কোন অনুমোদন নেওয়া হয়নি। তাই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আপনারা এ বিষয়ে কথা বলতে পারেন। যেহেতু আমি অন্যত্রে বদলি হলাম।’মহেশখালি উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব শরীফ বাদশা বলেন,কক্সবাজার ডিসি অফিসে এ বিষয়ে একটি সিদ্বান্ত করবে বলে জানান।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।