Logo

জঙ্গলে বৃদ্ধার মানবেতর জীবনযাপন

আসমানীরে দেখতে যদি তোমরা সবে চাও, রহিমদ্দির ছোট্ট বাড়ি রসুলপুরে যাও। বাড়ি তো নয় পাখির বাসা ভেন্না পাতার ছানি, একটুখানি বৃষ্টি হলেই গড়িয়ে পড়ে পানি। পল্লী কবি জসীমউদ্দিনের ‘আসমানী’ কবিতার পংক্তিগুলো বাস্তব জীবনে বাঁশঝাড়ের ভেতর খুপরি ঘরে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে টিকে থাকা ৬৫ বছর বয়সী স্বামী পরিত্যক্তা ও নিঃসন্তান লক্ষ্মী রাণীর জীবনের সাথে মিলে গেছে। নেত্রকোনা জেলার বারহাট্টা সদর উপজেলাধীন গুহিয়ালা গ্রামের বাঁশঝাড়ের ভেতর খুপরি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন সহায়সম্বলহীন লক্ষ্মী রাণী।
লক্ষ্মী রাণীর সাথে কথা বলতে গেলে, তিনি কেঁদে কেঁদে বলেন, ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে পরিস্থিতির কাছে আমি পরাজিত, জীবনে বেঁচে থাকা আমার কাছে শুধুই যন্ত্রণা ছাড়া আর কিছুইনা। এখন শুধু ভগবানের কাছে একটাই প্রার্থনা করি তাড়াতাড়ি যেন আমার মৃত্যু হয়। মৃত্যুই আমার একমাত্র মুক্তির পথ। তিনি আরও বলেন, ৩০ বছর আগে স্বামী পরিত্যক্তা হবার পর আমার একূল আর অকূলে আপনজন বলতে কেউ নেই। তাই অপারগ হয়ে বাঁশ ঝাড়ের ভিতর খুপরি ঘরে অনিশ্চয়তায় ঝড়-বৃষ্টির মধ্যে অনেক কষ্টে অনিশ্চয়তায় দিন কাটাইতেছি।
প্রতিবেশী ছালমা বেগম বলেন, জঙ্গলের ভেতরে এখন যে ঘরে এই বৃদ্ধা বাস করছেন সেখানে খাবার তো দূরের কথা, পানযোগ্য পানি পর্যন্ত নেই। ভাঙ্গা পাত্রে জমে থাকা বৃষ্টির পানিই তার ভরসা। মানুষের বাড়িতে চেয়ে একবেলা খাবার জুটলেও আরেক বেলা না খেয়ে দিন কাটে তার। অসুস্থ হলেও খোঁজ নেবার কেউ নেই। প্রতিনিয়তই তিনি, কষ্ট-যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে শুধুই মৃত্যু কামনা করেন।
এলাকাবাসীয় জানান, ব্যক্তিগত জীবনে তিনি স্বামী পরিত্যক্তা এবং নিঃসন্তান। তাই তার এই বয়সে সেবা করার মত কেউ নেই।
এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে বলেন, এই দুঃখিনী বৃদ্ধা ভূমিহীন হওয়ার পরও তার ভাগ্যে একটি থাকার মতো ঘর জুটেনি। বারহাট্টার বিত্তশালী কিংবা প্রশাসন থেকেও কেউ তার খোঁজ পর্যন্ত নেয়নি।
এলাকাবাসী, বারহাট্টা উপজেলা প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যেন লক্ষ্মী রাণীকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর উপহার স্বরূপ দেয়া একটি সরকারি ঘরের ব্যবস্থা এবং দু’বেলা দুমুঠো খাবারের ব্যবস্থা করে দেয় তার জন্য জোর দাবি জানান।

 


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published.


Theme Created By Raytahost.Com