নারায়ণগঞ্জের বাণিজ্যিক ভবনগুলোর মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার শীর্ষে রয়েছে শহরের টানবাজার এলাকায় অবস্থিত হাবিব কমপ্লেক্স। ভবনটির গ্রাউন্ড ফ্লোরে রয়েছে বিভিন্ন দোকান, গার্মেন্টস ও জুটের গোডাউন। ভবনের প্রথম তলায় রয়েছে মোবাইল মার্কেট, কাপড়ের দোকান ও বিভিন্ন কারখানার দোকান। দ্বিতীয় তলায় রয়েছে বিভিন্ন দোকানপাট। এছাড়া প্রতিটি ফ্লোরেই রয়েছে গার্মেন্টস ও কারখানা। পঞ্চমতলার পর থেকে রয়েছে আবাসিক ফ্ল্যাট বাসা। এ ভবনে ফায়ার এক্সিট নেই। নেই অগ্নিনির্বাপনের কোনো ব্যবস্থাও। ফায়ার সার্ভিস থেকে ভবনটি অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে বহু আগেই।
সরেজমিনে ভবনটি ঘুরে দেখা গেছে, ভবনের প্রথম তলায় অবস্থিত মোবাইল মার্কেটের বেশ কয়েকজন দোকান মালিক তাদের দোকান বড় করতে ভেঙ্গে ফেলেছে ভবনের পিলার। প্রায় ১০ থেকে ১২টি পিলার ভেঙ্গে ফেলায় ভবনটি চরম ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পরেছে বলে অভিমত ভবনের বিভিন্ন দোকানে কর্মরত শ্রমিকদের। তবে মালিকের ভয়ে কেউ এ বিষয়ে বেশি কিছু বলতে রাজি হয়নি। তবে তারা জানিয়েছেন, এভাবে চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জে আরেকটি রানা প্লাজা ট্রাজেডি ঘটলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
জানা যায়, ভবনটির রাজউকের অনুমতি রয়েছে ৬তলা পর্যন্ত। পরবর্তীতে ৮তলা পর্যন্ত অলিখিত মৌখিক অনুমতি দিয়ে বর্ধিত করার কথা বলে ভবন মালিক ৮তলা পর্যন্ত ভবনটি বর্ধিত করেন। এদিকে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে উল্লেখ করে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স এন্ড এক্সপোর্টার্স এসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এটির বর্ধিতাংশ ভেঙে ফেলতে চিঠিও দিয়েছিল। যদিও মালিকপক্ষের দাবি, ভবনটির ৯তলা পর্যন্ত রাজউকের অনুমতি রয়েছে।
ভবনের দোকান মালিকদের সূত্রে জানা যায়, ভবনটিতে প্রতিদিন সকাল থেকে হাজারো মানুষ কেনাকাটা ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কাজে আসেন। এছাড়া এ ভবনে মানুষ বসবাসও করেন। এতো ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এভাবে ঘষামাজা করায় যেকোনো সময় এটি ভেঙে পড়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। হতে পারে প্রাণহানীও।
২০১৯ সালের ৩১ মে মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় শহরের রিভারভিউ কমপ্লেক্স এবং হাবিব কমপ্লেক্সের নাম উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনেসর সাংসদ একেএম সেলিম ওসমান বলেছিলেন, মার্কেট দু’টিতে নামে বেনামে অজস্র প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। যারা বিভিন্ন ব্রান্ডের নাম ব্যবহার করে অবৈধভাবে পণ্য বিদেশে পাচার করছে। তাদের বিকেএমইএ, বাংলাদেশে হোসিয়ারী এসোসিয়েশন বা নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের কোনো সদস্য পদ নেই। সম্পূর্ণ অবৈধভাবে প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করে। আমরা যারা বৈধভাবে ব্যবসা করছি তাদের ক্ষতিগ্রস্ত করছে। দেশের রপ্তানী আয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।
খোঁজ নিলে দেখা যাবে তারা কোনো প্রকার ইউডি প্রদান করে না, তাদের কোনো টিন সার্টিফিকেট নেই। কারখানাগুলোতে অগ্নিনির্বাপক কোনো ব্যবস্থা নেই। জরুরি অবতরণের ব্যবস্থা নেই। এখানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন কয়েক হাজার পাইকার সমাগম হয়। তারা হয়তো জানেনই না মার্কেটের কোথায় কী রয়েছে। এখানে যদি রানা প্লাজা বা চকবাজারের মতো ঘটনা ঘটে তাহলে কয়েক হাজার মানুষের প্রাণহানী ঘটবে। মানুষের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে রেখে পয়সা উপার্জন করবে এটা কোনো অবস্থাতেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারে তিনি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে পরিবেশ অধিদপ্তর ও কলকারখানা অধিদপ্তরের কাছে অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে এ ভবনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে নারায়ণগঞ্জের সচেতন মহল থেকে আওয়াজ উঠলেও রহস্যময় কারণে নিরবতা পালন করে গেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ। ফলে চরম ঝুঁকির মধ্যে প্রতিদিন বসবাস করতে হচ্ছে কয়েক হাজার মানুষকে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপ-সহকারি পরিচালক ফখরউদ্দিন আহমদ জানান, মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কথা হয়েছে। সব কিছু আমাদের একার পক্ষে সম্ভব না। জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনসহ সকলে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই সমস্যাগুলো সমাধান করা সম্ভব।
এ বিষয়ে জানতে ভবন মালিক আবদুল আউয়ালের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।