Logo
HEL [tta_listen_btn]

ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলার পর্দা নামল

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঢাকা আর্ন্তজাতিক বাণিজ্য মেলার ২৯তম আসর শুক্রবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেল ৪টায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাপ্তি ঘোষণা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর ভাইস চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইর প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আবদুর রহিম।
মুক্তমঞ্চে মনোজ্ঞ সঙ্গীত সন্ধ্যার মধ্যে দিয়ে কর্মসূচির সমাপ্তি ঘটে। এবারের মেলায় ৩৬২টি স্টল ছিল। এদের মধ্যে ভারত, পাকিস্তান, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া, হংকং ও মালয়েশিয়ার ১১টি প্রতিষ্ঠান এবারের মেলায় অংশ নেয়।
এদিকে মেলার শেষ সময়ে স্টল ও প্যাভিলিয়নগুলোতে বিভিন্ন অফার আর মূল্যছাড়ের জোয়ার ছিল। বিক্রেতারা নেমেছেন প্রতিযোগিতায়। ক্রেতা টানতে হাঁকডাক দিয়ে পণ্য বিক্রি করেন তারা। একটি কিনলে ১০টি ফ্রি, অর্ধেক দাম, আখেরি অফার, মেগা অফার চলে স্টলে স্টলে। মেলায় স্যুট, কোট-ব্লেজারের দাম এক হাজারের নিচে নেমে আসে। ৬০০ থেকে ৭০০ কিংবা ৮০০ টাকায় দর কষাকষি করে ব্লেজার কিনেন তরুণরা। কে কার আগে পণ্য বিক্রি করবেন এমন প্রতিযোগিতায় নেমেছিল বিক্রেতারা। এবারের মেলায় ঘরে বসেই অনলাইনে টিকেট কাটা গেছে। টিকেট কাটা নিয়ে ঝক্কি ঝামেলাও ছিল কম।
সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, শেষ দিন শুক্রবারও মানুষের ঢল নামে বাণিজ্য মেলায়। স্টল ও প্যাভিলিয়নে ঝুলে মূল্যছাড়, ডিসকাউন্ট, একটি কিনলে একটি ফ্রি, একটি কিনলে দু’টি ফ্রিসহ নানা লোভনীয় অফারের প্লেকার্ড। কোনো কোনো স্টল ও প্যাভিলিয়নে পণ্যের গায়ে বেশি দাম লিখে ডিসকাউন্টের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও অভিযোগ ছিল ক্রেতাদের।
লোভনীয় অফার দিয়ে মেলায় পণ্য বিক্রির জাল পাতে কতিপয় ব্যবসায়ী প্রতারকচক্র। বিক্রি বাড়াতে অফারের নামে তারা ক্রেতাদের সাথে প্রতারণা করে। আর অসচেতন ক্রেতারাও না বুঝে তাদের পণ্য কিনতে ঝুঁকে পড়ে। অনেকেই এসব পণ্য কিনে প্রতারিত হয়েছেন। নিম্নমানের পণ্যে বিদেশি ও ব্র্যান্ডের পণ্যের স্টিকার লাগিয়ে বিক্রি করা হয়। কোনো কোনো স্টলের কিছু কিছু পণ্যের মোড়কে মূল্য ছিল না। যারা ভোক্তা অধিকার আইন অমান্য করে অনৈতিকভাবে ব্যবসা করেছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোনো ভোক্তা সরাসরি মেলায় লিখিত অভিযোগ করলে তাৎক্ষণিক তা নিষ্পত্তি করা হয়েছে।
তরুণীদের পদচারণায় মুখর হয়ে ওঠে প্রসাধনী ও ইমিটেশনের গহনার দোকান। সবাই কিনছেন পছন্দের পণ্য। কাপড়, কসমেটিকস, ক্রোকারিজ, সৌন্দর্যবর্ধক সামগ্রী, রুটি মেকার, ইলেক্ট্রনিকস সামগ্রী, গৃহস্থালি পণ্য, প্লাস্টিক সামগ্রী, ইমিটেশনের গহনা, সিরামিক, প্রেসার কুকার, ফ্রাইপ্যান, ভেজিটেবল কাটার, চামড়াজাত পণ্য, খাদ্যপণ্য, মেলামাইন, খেলনা, পাট ও আসবাবপত্র ও আইসক্রিমের স্টলে ক্রেতাদের ভিড়ে বেসামাল দোকানি। সবাই কিছু না কিছু কিনছেন।
এবারের মেলায় রক্তাক্ত জুলাই-আগষ্ট বিপ্লব ও বিপ্লবীদের আত্মত্যাগকে স্মরণ রাখার জন্য জুলাই চত্বর, ছত্রিশ চত্বর এবং ইউথ প্যাভিলিয়ন নামে তিনটি পৃথক স্টল দেয়া হয়েছে। এখানে জুলাই বিপ্লবের নানা স্লোগান, গ্রাফিতি এবং বাণী প্রদর্শন করা হয়েছে। সকল শ্রেণির মানুষ সেগুলো গভীর আগ্রহের সাথে পরিদর্শন করে।
মেলার শেষ দুইদিন বৃহস্পতি ও শুক্রবার দোকানী ও ক্রেতাদের সাথে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। শুক্রবার যমুনা টেলিভিশনের রূপগঞ্জ প্রতিনিধি জয়নাল আবেদীন জয়কে তুচ্ছ ঘটনায় দর্শণাথীরা পিটিয়ে আহত করেছে। আর্ন্তজাতিক বাণিজ্যমেলায় এ হামলা ও মারামারির ঘটনা এটিই প্রথম।
বাংলাদেশ রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সচিব বিবেক সরকার বলেন, ‘এবারের ঢাকা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলায় ক্রেতা-দর্শনার্থীর সংখ্যা আশানুরূপ ছিল। গড়ে প্রতিদিন ৪৫ থেকে ৫০ হাজার মানুষ প্রবেশ করেছে। স্টল ও প্যাভিলিয়নে প্রচুর কেনা-বেচা হয়েছে। মেলা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়েছে। তাতে প্রমাণিত হয় পূর্বাচলের বাণিজ্যমেলার স্থায়ী ভেন্যু ক্রেতা-দর্শনার্থীরা বরণ করে নিয়েছে।’
প্রসঙ্গত, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ইপিবির যৌথ উদ্যোগে ১৯৯৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দেশীয় পণ্যের প্রচার, প্রসার, বিপণন, উৎপাদনে সহায়তার লক্ষ্যে বাণিজ্য মেলা রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে আয়োজন করা হতো। করোনা মহামারির কারণে ২০২১ সালে মেলা আয়োজন করা হয়নি। আর মহামারির বিধিনিষেধের মধ্যে ২০২২ সালে প্রথমবার মেলা পূর্বাচলে বিবিসিএফইসিতে আয়োজন করা হয়। এর আগে গত ১ জানুয়ারি পূর্বাচলের বাংলাদেশ-চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে মেলার উদ্বোধন করেন অন্তবর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com