বৈশাখেও দেখা নেই কালবৈশাখী ঝড়ের। বৈশাখের আকাশ এখনও যেনো চৈত্রের দাবদাহের দখলে। সূর্যের প্রখর রোদে পুড়ছে সারা দেশ। তীব্র তাপদাহে দুর্বিসহ জনজীবন। জীবিকার তাগিদে প্রখর রোদেও পথে নামতে হচ্ছে নিম্নআয়ের মানুষদের। রোদে পুড়ে রিকশা চালাতে হাঁপিয়ে উঠছেন চালকরা। ঘাম ঝরা শরীর নিয়ে গাছ তলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। আর এই বৈশাখ জুড়ে টানা গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া দপ্তর।
বুধবার (১৭ এপ্রিল) আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, মঙ্গলবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪০.৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এছাড়া সর্বোচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে মোংলায় ৪০.৩, যশোর ও ঈশ্বরদীতে ৩৯.৮, খুলনায় ৩৯.৫, রাজশাহীতে ৩৯.৩, ফরিদপুর ও কুমারখালীতে ৩৯.২, রাঙ্গামাটিতে ৩৯.০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এদিকে বৈশাখের শুরুতেই নারায়ণগঞ্জ জেলা জুড়ে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ শুরু হয়েছে। বৈশাখের কাঠফাঁটা রোদের ভ্যাপসা গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে জনজীবন। তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। রেহাই পাচ্ছে না প্রাণীকুলও। প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছে না। যারাই প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তারা যাত্রাপথে একটুখানি স্বস্তির আশায় মানুষ বৃক্ষের ছায়ায় আশ্রয় নিলেও স্বস্তি পাচ্ছেন না। তীব্র গরমের মাঝে প্রকৃতিতে বাতাসের মাত্রা কমে যাওয়ায় অস্বস্তি আরো বাড়ছে।
তীব্র দাবদাহের কারণে ভিক্ষা করতে বের হতে পারেননি শারীরিক প্রতিবন্ধী রমজান আলী। তিনি বলেন, যেই গরম শইল মনে অয় পুইড়া যায়। আইজকা দিনের বেলা আর ভিক্ষা করতে বাইর হই নাই। সারাদিন শহীদ মিনারের কোনায় গাছতলায় বইয়া আছিলাম।
রিকশাচালক মতিন মিয়া বলেন, বৈশাখের এই তীব্র রোদের কারণে রিকশা চালাতে খুব কষ্ট হচ্ছে। এত গরম যে রাস্তায় দাঁড়ানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে। গরমের কারণে মানুষ কম বের হচ্ছে। ফলে আয়-ইনকাম কমে গেছে।
শহরের বাসিন্দা রেহানা বেগম বলেন, প্রচন্ড গরম পড়েছে। বাচ্চা নিয়ে খুবই সমস্যায় আছি। ঘরের মধ্যে গরমে থাকা যায় না। আমার সন্তান ৩ দিন থেকে জ্বর-সর্দি ও কাশিতে ভুগছে। জানি না কবে বৃষ্টির দেখা মিলবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বিথী আক্তার কাছে এই গরমকে আগুন মনে হয়েছে। বিথী আক্তার বলেন, দিনের বেলায় রুমে বসে থেকেই মনে হচ্ছিলো গরমে মাথাটা ঘুরছে। ফ্যানের বাতাসে কিছু হয়না। বালিশ-বিছানা সবকিছু গরম।
তবে আবহাওয়া অফিস বলছে, আগামী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এই তাপদাহের প্রকোপ তুলনামূলক কম থাকবে। এরপর শুক্রবার থেকে আবারও পর্যায়ক্রমে গরম বাড়বে। তখন তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রিও ছাড়িয়ে যাওয়ার শঙ্কা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আপাতত স্থায়ী বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই। দেশের কোথাও কোথাও হতে পারে কালবৈশাখী। বৃষ্টি হলেও বাতাসে জলীয় বাষ্পের বাড়তি উপস্থিতির কারণে গরম বেশি অনূভুত হবে। এতে মূল তাপমাত্রা কিছুটা কম থাকলেও অনূভুত তাপমাত্রার পরিমাণ হবে ৪৪ থেকে ৪৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক বলেছেন, আজ বুধবার ও আগামীকাল বৃহস্পতিবার বিশেষ করে তাপপ্রবাহের আওতাধীন এলাকা একটু কমে গেলেও বিদ্যমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। বিচ্ছিন্নভাবে বজ্রঝড় বিদ্যমান তাপপ্রবাহে তেমন একটা প্রভাব ফেলতে পারবে না। শুধু কিছু এলাকার তাপপ্রবাহ কমে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, আগামী শুক্রবারের পর এই তাপমাত্রা আবার বাড়তে শুরু করবে। কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি পর্যন্ত ওঠা-নামা করতে পারে।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।