২১ জানুয়ারি থেকে গত ১৭ মার্চ পর্যন্ত বিদেশ থেকে দেশে এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন। তাদের মধ্যে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন। এছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মকর্তাও আছেন। তাদের মধ্যে যাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকা উচিত তা নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের (ডিসি) চিঠি দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। বিদেশ ফেরতদের নাম-ঠিকানার তালিকাও ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকেও ডিসি এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের (ইউএনও) দেশে আসা প্রবাসীদের ওপর নজর রেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। হোম কোয়ারেন্টিনে না থেকে বাইরে ঘোরাঘুরি করলে তাৎক্ষণিক ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা করার নির্দেশ রয়েছে। ফলে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত আগের চেয়ে বেশি সক্রিয়। এ বিষয়ে জিরো টলারেন্স অবস্থান নিয়েছে মাঠ প্রশাসন। ইতিমধ্যে বিদেশ থেকে এসে বাইরে ঘোরাঘুরির অপরাধে বেশ কয়েকজনকে জরিমানা করে বাধ্যতামূলক হোম কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সচিব শেখ ইউসুফ হারুন বলেন, বিদেশ থেকে ফিরে আসা কর্মকর্তাদের আমরা ১৪ দিন অফিস করতে না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছি। আজ (গতকাল বুধবার) সকালেই এ সংক্রান্ত নির্দেশনা ডিসিদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া অন্য আরেক নির্দেশনায় যারা হোম কোয়ারেন্টাইনে থেকেও মুক্তভাবে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ডিসিদের কাছে পাঠানো নির্দেশনায় বলা হয়েছে, যেসব মানুষ হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নামে চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন, শ্বশুরবাড়ি বা অন্যান্য জায়গায় যাচ্ছেন তাদের সরকারের নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। জনস্বাস্থ্য, জননিরাপত্তা ও জনকল্যাণের জন্য আমরা তাদের ছাড় দিতে পারি না। তাই আপনাদের জনসচেতনতা সৃষ্টি ও প্রয়োজনীয় স্থানে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার অনুরোধ করা হচ্ছে।
জানা গেছে, গত ২১ জানুয়ারি থেকে ১৭ মার্চ পর্যন্ত বিদেশ থেকে ফিরে এসেছেন ৬ লাখ ২৪ হাজার ৭৪৩ জন। তারা প্রত্যেকেই স্ক্রিনিংকৃত যাত্রী। এসব যাত্রীর মধ্যে ৩ লাখ ৯ হাজার ১৩৮ জন শাহজালাল, শাহ আমানত ও ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছেন। বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে এসেছেন ৩ লাখ ৬২১ জন। চট্টগ্রাম ও মোংলা সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করে দেশে ফিরেছেন ৭ হাজার ৯৫৫ জন। ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট ও বেনাপোল রেলওয়ে স্টেশন দিয়ে যাত্রী প্রবেশ করেছেন ৭ হাজার ২৯ জন। গত মঙ্গলবার পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় এসব বন্দর ব্যবহার করে দেশে ফিরেছেন ৮ হাজার ৬৬৮ জন। তবে ওই ২৪ ঘণ্টায় দুই রেলস্টেশন ব্যবহার করে কোনো বাংলাদেশি ফিরে আসেননি।
গত ১৫ মার্চ সন্ধ্যায় হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশ অমান্য করে বাইরে যাওয়ার অপরাধে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ায় সৌদিপ্রবাসী লাল মিয়াকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুল আলম। গত ৬ মার্চ লাল মিয়া সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। তাকে ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছিল। সরকারি নির্দেশ অমান্য করে তিনি বাড়ির বাইরে গিয়ে অবাধে চলাফেরা করেন। স্থানীয়রা খবর দিলে ইউএনও তাকে আটক করে জরিমানা আদায় করেন। পরে কোয়ারেন্টাইনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
গতকাল প্রশাসনের নির্দেশ অমান্য করার দায়ে কক্সবাজারে বিদেশফেরত দুই প্রবাসীকে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পরে ওই দুই যুবককে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে।
গত ৯ মার্চ কাতার থেকে বাংলাদেশে আসেন ৪০ বছরের এক ব্যক্তি। তার বাড়ি বগুড়ার সোনাতলায়। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসার পর কর্তৃপক্ষ তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার নির্দেশনা দেয়। কিন্তু তিনি হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকেননি।
শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের পরিচালক গ্রুপ ক্যাপ্টেন এএইচএম তৌহিদ-উল-আহসান বলেন, করোনা আক্রান্ত কোনো দেশ থেকে বাংলাদেশি কেউ এলে সেলফ (নিজ উদ্যোগে) কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। আমরা এসব বিষয় কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করছি। কোনো ফ্লাইট বিমানবন্দরে অবতরণ করার পরপরই সংশ্লিষ্ট সবাই সতর্ক হয়ে যায়। যাত্রীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বের হতে দেওয়া হয়। তবে যেসব দেশে করোনাভাইরাসের প্রকোপ রয়েছে তাদের হাজিক্যাম্প বা হোম কোয়ারেন্টাইন পাঠানো হয়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইতালি ও সৌদি আরবে কয়েকজন প্রবাসী বাংলাদেশি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে সিঙ্গাপুরে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন বাংলাদেশি রোগীর অবস্থার উন্নতি হয়নি। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব প্রবাসী বাংলাদেশির পরিবারের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ রাখ
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।