Logo
HEL [tta_listen_btn]

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা! নড়াইলের কালিয়ায় অবাধে কাঠ পুঁড়িয়ে তৈরী হচ্ছে অবৈধ কয়লা

পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকা! নড়াইলের কালিয়ায় অবাধে কাঠ পুঁড়িয়ে তৈরী হচ্ছে অবৈধ কয়লা

মোঃ জিহাদুল ইসলাম, কালিয়া, নড়াইল:

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামে নদীর তীরে অবৈধ চুল্লিতে অবাধে কাঠ পুড়িয়ে তৈরি হচ্ছে কয়লা। প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে বিভিন্ন বনজ ও ফলজ গাছ কেটে এখানে কাঠ সরবরাহ করা হয়। স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠেছে ১৪টি কয়লা তৈরির বিশেষ ধরনের চুলা। এতে একদিকে, যেমন বনজ সম্পদ ধ্বংস হচ্ছে, পাশাপাশি সৃষ্ট ধোঁয়ায় তৈরি হচ্ছে শ্বাসজনিত নানা ব্যাধি। অপরদিকে, পরিবেশ ও জীববৈচিত্রেরও মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের ইউপি সদস্য আসলাম মোল্যা ও তারিক মোল্যা যৌথভাবে ১৪টি কয়লা তৈরির চুলা নিয়ন্ত্রণ করেন। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব কয়লার কারখানায় দেদারছে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। জেলা প্রশাসক ও পরিবেশ অধিদফতরের কোনো অনুমোদন ছাড়াই এসব কয়লা তৈরির কারখানা গড়ে উঠেছে। বিধিনিষেধ থাকার পরও জনবসতি এলাকায় ও ফসলি জমি নষ্ট করে এসব কারখানা স্থাপন করা হয়েছে। শক্ত কাঁচা লাল মাটি, ইট ও কাঠের গুঁড়া মিশিয়ে তৈরি করা চুল্লিতে শতশত মণ কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। কয়লা শ্রমিকরা জানান, চুল্লির মধ্যে সারিবদ্ধভাবে কাঠ সাজিয়ে একটি মুখ খোলা রেখে অন্য মুখগুলো মাটি এবং ইট দিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয়। খোলা মুখ দিয়ে আগুন দেয়া হয় চুল্লিতে। আগুন দেয়া শেষ হলে সেটিও বন্ধ করে দেয়া হয়। কয়েকদিন পোড়ানোর পর চুলা থেকে কয়লা বের করা হয়। প্রতিটি চুল্লিতে প্রতিবার ২৫০ থেকে ৩০০ মণ কাঠ পোড়ানো হয়। কাঠ পুড়ে কয়লা হতে সময় লাগে ৮ থেকে ১০ দিন। পরে কয়লা ঠান্ডা করে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে চটের বস্তায় ভরে ট্রলারসহ বিভিন্ন যানবাহনযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চালান করা হয়। কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরি অবৈধ হলেও এ ব্যবসায় অল্প পুঁজিতে অনেক লাভ হওয়ায় এ ব্যবসা বেছে নিয়েছে তারা। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, প্রতি বস্তা কয়লা ৪০০-৫০০ টাকায় বিক্রি হয়। এভাবে শত শত টন কাঠ পুড়িয়ে কয়লা বানিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা। ভূক্তভোগীরা জানান, কয়লা তৈরির চুল্লির কালো ধোঁয়ায় শিশুসহ এলাকার মানুষের মধ্যে শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিচ্ছে। দূষিত হচ্ছে এলাকার পরিবেশ, নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি। সেই সঙ্গে জীববৈচিত্রও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। বিভিন্ন গাছপালায় মড়ক দেখা দিয়েছে। নিয়মিত এই বিশাল পরিমাণে গাছের গুড়ি পুড়িয়ে কয়লা বানানোর ফলে খুবই দ্রুতই ওই এলাকায় অক্সিজেন ঘাটতিসহ নানা প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও রোগবালাই বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন। সচেতন এলাকাবাসীর অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট ককর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত হয়েও কোনো ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। অবৈধ কয়লা ব্যাবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ভুক্তভোগী অনেকেই মুখ খুলতে চায়নি অজানা আতংকে। নড়াইল সিভিল সার্জন মোঃ আব্দুল মোমেন বলেন, কয়লা তৈরিতে কাঁচা কাঠ পোড়ানোয় কার্বন ও সিসা নির্গত হয়। যে এলাকায় এসব চুলায় কাঠ পুড়িয়ে ধোঁয়ার সৃষ্টি করা হচ্ছে, সেখানে নিশ্চিতভাবে শিশু জন্মগতভাবেই ফুসফুসের সমস্যা নিয়েই জন্ম নেবে। এ ছাড়া এসব চুল্লির ধোঁয়ায় মানুষের অ্যাজমা সমস্যা, ফুসফুসের শ্বাসকষ্টজনিত রোগ ও এলার্জির সমস্যা এবং চোখের সমস্যাসহ নানাবিধ রোগ হতে পারে। এ বিষয়ে হামিদপুর ইউপি চেয়ারম্যান পলি বেগম বলেন, ইউপি সদস্য আসলাম অবৈধ কয়লা কারখানা চালায় আমি জানি কিন্তু এ সম্বন্ধে আমি কিছুই বলতে পারবো না। এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর, যশোর এর উপ- পরিচালক সাঈদ আনোয়ার বলেন, কাঠ পুঁড়িয়ে অবৈধ ভাবে কয়লা কারখানা পরিচালনা পরিবেশের সাথে সাংঘর্ষিক। অনুমোদনহীন অবৈধ কয়লা কারখানা সম্বন্ধে অকিবহাল ছিলাম না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম। এ ব্যাপারে দ্রুত আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহন করা হবে। এ প্রসঙ্গে ইউএনও কালিয়া মোঃ নাজমুল হুদা বলেন, কাঠ পুড়িয়ে কয়লা তৈরির বিষয়টির সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য আমার কাছে ছিল না। তবে সরকারি অনুমোদন ছাড়া কয়লার কারখানা স্থাপনের বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। তদন্ত সাপেক্ষে অবৈধ কয়লার কারখানা বন্ধসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com