হোমনা সংবাদদাতা
কুমিল্লার হোমনায় এক ইন্টারনেট ক্যাবল ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (১৭ ফেব্রæয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে মো.সালাহ উদ্দিন প্রকাশ জহির (২৬) নামের ওই ব্যবসায়ীকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ইউপি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট পূর্ব শত্রæতার জের ধরে তাকে হত্যা করা হয়। খুনের ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল পাঠান ও তার ভাতিজাসহ আরও অনেককেই অভিযুক্ত করছেন নিহতের বোন। সহকারি পুলিশ সুপার হোমনা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার স্পিনা রানী প্রামাণিক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসর রুমন দে, থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কায়েস আকন্দ ঘটসনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। নিহতের বড় বোন পারুল আক্তার জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তার ভাই সালাহ উদ্দিন প্রকাশ জহির ইন্টারনেট ওয়াইফাই লাইনের সংস্কার কাজের জন্য উপজেলার দুলালপুর যাওয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর রাত আটটার দিকে তারা খবর পান- তার ভাইকে দুর্বৃত্তরা হত্যা করে উপজেলার কলাগাছিয়া স্টিল ব্রিজের ওপর ফেলে রেখেছে। পরে তার বড় ভাই আরশাদ মিয়া বাড়ির লোকজন নিয়ে জহিরকে উদ্ধার করতে কলাগাছিয়া স্টিল ব্রিজের দিকে রওনা হন। সেখানে দেশীয় অস্ত্রধারী দৃর্বত্তরা তাদেরকেও ধাওয়া করে। এরপর তারা থানায় খবর দেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে প্রায় ৪০ মিনিট পর মুমূর্ষ অবস্থায় তারা জহিরকে সেখান থেকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। নিহতের বোন পারুল আক্তার আরো জানান, কারা তাকে হত্যা করেছে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নেওয়ার পর তার নিহত ভাই তাদের নিকট সব বলে গেছেন এবং সে কথা মোাবাইলে রেকর্ড করা হয়েছে। তিনি জানান, একই গ্রামের মোকবল পাঠান, জালাল পাঠান, বাছির, ইয়াছিন, সেলিম, রিফাত, শেখ ফরিদ, সুমন, বায়েজিদ, ছাব্বির সৈকতসহ ২০/৩০ জন মিলে কুপিয়ে ও হাতুড়িপেটা করে তার ভাইকে মৃত ভেবে ফেলে গেছে। পারুল আক্তারের আরও অভিযোগ, খুনিরা তার ভাইকে হত্যা করে রাতে এলাকায় এসে আতশবাজি ফুটিয়ে আনন্দ ফ‚র্তি করে এবং বলতে থাকে এবার সব শেষ করে দিয়েছি। তিনি বিলাপ করতে করতে তার ভাইয়ের খুনিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। নিহতের বড় ভাই আরশাদ মিয়ার অভিযোগ গত ইউপি নির্বাচনে আছাদপুর ইউনিয়নে তারা আওয়ামীলীগ প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমানের নির্বাচন করার কারণে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল পাঠান ও স্বতন্ত্র প্রার্থী তার ভাতিজা মোকবল পাঠানদের সাথে তাদের শত্রæতার সৃষ্টি হয়। এ কারণেই তারা তার ভাইকে খুন করেছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. সাহিদা সিকদার জানান, রাত ৯টার দিকে মো. সালাহ উদ্দিন প্রকাশ জহির নামে এক রোগিকে মুমূর্ষু অবস্থায় স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে নিয়ে আসেন স্বজনরা। রোগির শরীরের বেশিরভাগ অংশেই জখম ছিল। বলা যায়, দুই পা ও দুই হাত প্রায় বিচ্ছিন্ন হওয়ার মতই, ঘাড়েও ধারালো ছোড়ার আঘাত রয়েছে, হাতের তিনটি আঙ্গুুল বিচ্ছিন্ন ছিল। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে রোগির শরীর ঠাÐা ও নিস্তেজ ছিল। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রæত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, লাশ ঢাকা মেডিকেল থেকে ময়না তদন্তের জন্য নেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে মামলা প্রক্রিয়াধীন। পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। এ খুনের সাথে যারাই জড়িত থাকুক তাদেরকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হবে। এ ঘটনায় বর্তমান চেয়ারম্যান জালাল পাঠানের মোবাইল নাম্বারে ফোন করলে ঢাকা সাভারের অন্য ব্যক্তি রিসিভ করে রং নাম্বার বলে জানান। বলেন, এটি জালাল পাঠানের নাম্বার নয়। স্বতন্ত্র প্রার্থী মোকবল পাঠান বলেন, এই খুনের সঙ্গে আমার কোনো সম্পৃক্ততা নেই। যারা এ ঘটনা ঘটিয়েছে তাদের উপযুক্ত বিচার হোক। তারা আইনের আয়ত্বে যাক। আমরা এই ভিকপিটিমের পরিবারের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করছি।
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।