Logo
HEL [tta_listen_btn]

৩শ’ শয্যা হাসপাতালে নজরদারি নেই

৩শ’ শয্যা হাসপাতালে নজরদারি নেই

দেশের আলো রিপোর্ট
নগরীর ৩শ’ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে রোগীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নজরদারি না থাকায় ডাক্তার ও কর্মচারিরা নিজেদের ইচ্ছামতো ডিউটি করছেন। ফলে প্রতি পদে পদে নানাভাবে হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ছেন রোগীরা। বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুরে সরেজমিন হাসপাতালের প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকতেই রোগী ভেবে পথ আটকে দাঁড়ালো দু’জন। বললেন, ডাক্তার দেখাবেন? ভিতরে ভিড়, ৩ ঘন্টায়ও ডাক্তার দেখাতে পারবেন না। চলেন কমে প্রাইভেটে দেখায় দেই। অসম্মতি জানিয়ে হাসপাতালের বহির্বিভাগের ভিতরে প্রবেশের পূর্বেই তুমূল হৈচৈ এর আওয়াজ পাওয়া গেলো। ভেতরে ঢুকতেই চোখে পড়ল মহিলা টিকেট কাউন্টারের সিরিয়ালে শতাধিক রোগী। কিন্তু পুরুষের সিরিয়ালে রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক। মহিলা কাউন্টারে টিকেট বিক্রেতা নেই। আধঘন্টা সময় পার হলেও টিকেট বিক্রেতার দেখা মিলে না। এদিকে আর কিছুক্ষণ পরেই বন্ধ হয়ে যাবে টিকেট কাউন্টার, বন্ধ হবে ডাক্তারের রোগী দেখার সময়। হয়ত এসব রোগীরা ডাক্তার দেখাতে পারবেন কিংবা ফিরতে হবে ডাক্তার না দেখিয়েই। হাসপাতালের অব্যবস্থাপনা দেখে রোগীরা হতাশা প্রকাশ করলেও রোগীদের এই ভোগান্তি যেন নিত্যদিনের চিত্র। বুধবার দুপুরে শহরের খানপুরে ৩শ’ শয্যা হাসপাতালের রোগীদের এই ভোগান্তির দৃশ্য চোখে পড়ে। মহিলা টিকেট কাউন্টারের টিকেট বিক্রেতার দায়িত্বে রয়েছেন হাসপাতালের কর্মচারি মনির। তিনি রোগীদের টিকেট শেষ, পুনরায় টিকেট আনবেন জানিয়ে সাড়ে ১১টার দিকে কাউন্টার থেকে প্রস্থান করেন। ঘন্টাখানেক টিকেট না পেয়ে হৈচৈ শুরু করেন রোগীরা। পৌনে ১টার দিকে রোগীদের অনুরোধে অন্য কর্মচারি তাকে ডেকে নিয়ে আসেন। তবে এরমধ্যে কিছু রোগী আজ (বুধবার) আর ডাক্তার দেখাতে পারবেন না এই ভেবে বাড়ি ফিরে যান। টিকেট কাউন্টার ছেড়ে কোথায় ছিলেন এমন প্রশ্নে টিকেট বিক্রেতা মনির পান চিবুতে চিবুতে বলেন, এখানেই, টিকেট আনতে গিয়েছিলাম। এতক্ষণ কেন? এই প্রশ্নের জবাব এড়িয়ে গেলেন। জানা যায়, হাসপাতালের টিকেট বিক্রির সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত। ডাক্তারদের রোগী দেখার সময় দুপুর ২টা পর্যন্ত। কিন্তু এই সময়ের আগেই ফুরিয়ে যায় সেবার সময়। হাসপাতালের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মচারি এই বিষয়ে মন্তব্য করে বলেন, টিকেট বিক্রেতা রোগীদের সিরিয়ালে রেখে উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক। কারণ, এমন ঘটনা এর আগেও বহুবার হয়েছে। শেষে কিছু রোগী টিকেট পায়, কিছু আবার পায় না।
হাসপাতালে কানের চিকিৎসা করাতে এসে ডাক্তার না দেখিয়েই ফিরে যান শিউলি আক্তার। তিনি বলেন, ১১টা থেকে সিরিয়ালে দাঁড়িয়েছি। টিকেট বিক্রেতা টিকেট আনার কথা বলে যে গেছে এখনো আসেনি। টিকেট পেয়ে আবার ডাক্তারের কাছে সিরিয়াল ধরতে হয়। এতো দেরি হয়েছে, টিকেট পেলেও হয়তো ডাক্তার পাবো না। আজকে গার্মন্টেসে ছুটি নিয়ে আসছি। আরেকদিন ছুটি পাই কিনা সন্দেহ। ছুটি পাইলে সামনের সপ্তাহে আসব।
স্কুল শিক্ষক মরিয়ম বেগম বলেন, সরকারি হাসপাতালে আসলে টাকা কম খরচ হয়, এ কারণে এখানে আসা। কিন্তু চিকিৎসা করতে এসে এতো ভোগান্তি ভালো লাগে না। হাসপাতালে তো মানুষ শখে আসে না বাধ্য হয়েই আসে। আমার কোমরে অনেক ব্যাথা, এক ঘন্টা যাবৎ কেবল টিকেটের জন্য দাঁড়িয়ে থেকে ব্যথা অনেক বাড়ছে। বসার জায়গা নেই। আর অপেক্ষা সম্ভব না। ছেলেরে পাঠিয়েছি, রিকশা আনতে। চলে যাবো। ওনার কথা শেষ না হতেই একজন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধা বলেন, ইচ্ছা করে মানুষরে কষ্ট দিতাছে। বড় ডাক্তারের (হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের) কাছে বিচার দেওন দরকার।
৩শ’ শয্যা হাসপাতাল তত্ত¡াবধায়ক ডা. আবুল বাশার এ বিষয়ে বলেন, টিকেট কাউন্টারে মহিলা বিভাগে যিনি দায়িত্বে ছিলেন ওনি অবসর নিয়েছেন। মনিরকে আপাতত তার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মনির কেন তার দায়িত্বের সময় সেখানে ছিলেন না, বিষয়টি বিস্তারিত জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com