Logo
HEL [tta_listen_btn]

গ্যাস না থাকায় গৃহিনীদের ভোগান্তি

গ্যাস না থাকায় গৃহিনীদের ভোগান্তি

দেশের আলো রিপোর্ট
কাজে যাওয়ার আগেও গ্যাস পাইনা, আইসাও পাই না। সকালে ৮টায় কাজে যাই, আসতে রাইত হয়। মাঝরাইতে গ্যাস আসে। সারাদিন খাইটা আইসা রাত জাইগা রানতে পারি না। শরীরে আর সয় না। বাড়িওয়ালা সিলিন্ডার আইনা লইছে। আমাগো অত পয়সা নাই। কোন রকমে ইট দিয়া একটা ব্যবস্থা করছি। এক চুলায় ৩ ভাড়াইট্টা (ভাড়াটিয়া) রান্ধি। অনেকদিন ধইরা এমনেই চলতাছে, এমনে কয়দিন চলন যায়! কতুবপুর ইউনিয়নের গার্মেন্টসকর্মী শিউলি বেগমের মতো এমন ভোগান্তী নারায়ণগঞ্জের সদর উপজেলার বেশিরভাগ ঘরেই। ভোরের সূর্য ওঠার আগেই কমতে থাকে গ্যাসের চাপ। একপর্যায়ে সকাল ৭টা থেকেই চাপ কমে গ্যাসের চুলা বন্ধ হয়ে যায়। দুপুরের দিকেও থাকে একই অবস্থা। এসময়ে উপজেলার অধিকাংশ জায়গায় গ্যাস থাকেই না। বিকালে কোথাও কোথাও নিভু নিভু গ্যাস থাকে। রাত ১০টার পর আসে টিমটিমে গ্যাস। শহরের চাষাঢ়া, দেওভোগ, জল্লারপাড়, কাশিপুর, গলাচিপা, কলেজ রোড, জামতলা, মাসদাইর, উত্তর চাষাঢ়া, চাঁদমারী, মিশনপাড়া, আমলাপাড়া, নিতাইগঞ্জ, মন্ডলপাড়া, তামাকপট্টি, ঝালকুড়ি, দাপা-ইদ্রাকপুর, হাজীগঞ্জ, ব্যাংক কলোনী, খানপুর, তল্লা, সিদ্ধিরগঞ্জের মিজমিজি এলাকাসহ উপজেলার অধিকাংশ এলাকার বাসিন্ধারা চরম গ্যাস সংকটে রয়েছেন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় গ্যাসের সংকট চলছে বলে জানিয়েছে নারায়ণগঞ্জ তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। গ্যাস সংকট সমাধানের উদ্দেশ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন বলে জানান সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। এদিকে গ্যাস সংকট নিরসনের দাবিতে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের ডিও লেটার (আধা সরকারিপত্র) দিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। ভুক্তভোগী গ্রাহকের দাবি, নিত্যদিনের সমস্যায় রূপ নিয়েছে গ্যাস সংকট। নিয়মিত বিল পরিশোধ করেও গ্যাস পাচ্ছেন না। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করলেও কোন সমাধান হচ্ছে না। এদিকে গ্যাসের বিকল্প হিসেবে বেড়েছে স্টোভ, ইলেকট্রিক চুলাসহ গ্যাস সিলিন্ডারের মূল্য। দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন অসাধু ব্যবসায়ীরা।ভুক্তভোগী গ্রাহক স্কুল শিক্ষক শহীদুল্লাহ সরকার বলেন, রাত ১১টার পরে গ্যাস আসে আবার ভোরের দিকে চলে যায়। তাই সিলিন্ডার ব্যবহার করতে বাধ্য হয়েছি। এতে করে লাইনের গ্যাসের বিলও দিতে হচ্ছে আবার সিলিন্ডারও কিনতে হচ্ছে। এই গ্যাস সিলিন্ডার তো কোন সমাধান নাহ। এমনিতেই নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বেশি। এরমধ্যে বাড়তি দামে সিলিন্ডার কিনে রান্না করা আমাদের জন্য একটা শাস্তি। কিন্তু কোন ভুলে এই শাস্তি পাইতাছি জানি না। মাসদাইরের গৃহিনী আফিয়া খাতুন বলেন, সারাদিনের রান্না মধ্যরাতে করতে হয়। ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার খেতে হচ্ছে। ভাড়া বাসায় থাকি, খাবার গরম করার জন্য লাকড়ির চুলার বসানোর ব্যবস্থাও নেই। আগে দিনের বেলায় গ্যাস না থাকলেও রাতের বেলায় গ্যাস পাওয়া যেত। কিন্তু বর্তমানে মধ্যরাত ছাড়া কখনোই গ্যাসের দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। লামাপাড়া এলাকার গার্মেন্টসকর্মী সুমা বেগম জানান, গ্যাস না থাকায় সকালের নাস্তা দোকান থেকে কিনে খেতে হয়। অনেক সময় না খেয়েই কাজে যাই। দুপুরে ও রাতেও বাইরে থেকে কিনে খেতে হচ্ছে।
সিদ্ধিরগঞ্জ মিজমিজি এলাকার বাসিন্দা হাবিবুর রহমান জানান, তাদের এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই গ্যাস নেই। এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস অফিসে লিখিত আবেদন দিলেও কোনো কাজ হচ্ছে না। অথচ তাদেরকে গ্যাসের বিল ঠিকই দিতে হচ্ছে। বন্দরের রূপালী আবাসিক এলাকার গৃহবধূ ঝুমা আক্তার জানান, রাত ১২টায় ঢিমেতালে গ্যাস আসে। আবার ভোর ৫টার দিকে চলে যায়। বেশ কয়েকদিন ধরে শুধু শুক্রবার ছাড়া দিনে রান্না করার সুযোগ পাই না। এবার গত শুক্রবারও গ্যাস পাই নাই। সোমবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত সারাদিনে গ্যাস পেলাম না। স্বল্পের চক এলাকার গৃহবধূ নার্গিস আক্তার জানান, প্রায় ২ মাস ধরে গ্যাসের সংকট চলছে। চরম ভোগান্তির শিখার হচ্ছি। গ্যাস বিল ঠিকই নিচ্ছে, কিন্তু গ্যাস পাই না। তিতাস গ্যাস নারায়ণগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের উপ-মহাব্যবস্থাপক মামুনুর রশিদ এ বিষয়ে বলেন, নারায়ণগঞ্জে যে পরিমাণ গ্যাসের চাহিদা আছে, সেই পরিমাণ গ্যাস আমরা দিতে পারছি না। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় গ্যাসের সংকট তৈরী হয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জানিয়েছি। শীঘ্রই আমরা গ্যাসের সংকট নিরসন করতে পারব।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *


Theme Created By Raytahost.Com