আড়াইহাজার সংবাদ দাতা : আড়াইহাজার উপজেলা ২টি পৌরসভা ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত। এই উপজেলায় প্রায় ৭ লাখ মানুষের বসবাস। এর মধ্যে বিপুলসংখ্যক লোক কাপড় উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান পাওয়ার লুমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করে জীবীকা নির্বাহ করে।
তবে প্রাণঘাতী (কভিড-১৯) করোনারভাইরাস সংক্রমণ আতঙ্কে থমকে গেছে মানুষের দৈনিন্দন কর্মযজ্ঞ। বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক প্রতিষ্ঠান। কর্মরত প্রায় ২ লাখের মতো শ্রমিক এখন বেকার হওয়ার উপক্রম হয়ে পড়েছে। পরিবারের সদস্যদের মুখে খাবার তুলে দিতে অনেকেই দিশেহারা পড়ছেন। এতে জীবীকার তাগিদে অনেকেই কাজের সন্ধানে বিভিন্নস্থানে ঘুরাঘুরি করছেন। অনেকেই এখনো পাইনি সরকারের কোনো ত্রাণ সহযোগিতা। জীবিকার তাগিদে বাইরে বের হলেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বাঁধার মুখে পড়ছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সবাইকে মাইকিং করে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অনুরোধ করে যাচ্ছেন। উপজেলা জুড়েই চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত ও সেনা সদস্যদের টহল।
বৃহম্পতিবার (২১ এপ্রিল) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিন গেলে এমন চিত্রই চোখে পড়ে। উপজেলা গোপালদী, রামচন্দ্রী, শাহলমদী, কালিবাড়ি, দুপ্তারা ও বান্টি এলাকায় বিপুল সংখ্যক শিল্পপ্রতিষ্ঠান আছে। এসব প্রতিষ্ঠান করোনার থাবায় বন্ধ রাখা হয়েছে। বেকার হয়ে পড়েছে বিপুল সংখ্যক শ্রমিক। উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করতে না পারায় এবং ভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বন্ধ করে দিয়েছেন।
বান্টি এলাকায় বেশ কিছু শ্রমিক বলেন, তাদের সঞ্চিত অর্থ ক্রমেই শেষ হয়ে আসছে। সংসার চলবে কীভাবে এমন দুচিন্তায় তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে তাদের। এ পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার সহযোগিতাই তাদের মধ্যে অনেকেই পায়নি বলে জানান। স্থানীয় বিপুল সংখ্যক রিকশা চালক এখনো পায়নি ত্রাণ সামগ্রী। তবে উপজেলা প্রশাসন থেকে এরই মধ্যে প্রায় দেড় হাজার পরিবারের মধ্যে বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী বিরতণ করা হয়েছে। এর সংখ্যা আরো বাড়বে বলে জানানো হয়েছে।
উপজেলার জাঙ্গালিয়া এলাকায় দোকানপাট বন্ধ আছে। এতে এই এলাকার খেটে খাওয়া মানুষের দৈনিন্দন আয়ও থমকে গেছে। সাপ্তাহিক হাট ব্যতিত এই বাজারের প্রতিটি গলি এখন জনশূন্য থাকে। সবার মাঝে এক অজানা আতঙ্ক। তারপরও পুলিশের সদস্যরা মাইকিং করে সবাইকে দ্রুত বজায় রেখে চলাচল করার নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।
ব্যস্ততম গোপালদী বাজারে গিয়ে দেখা গেলো থমথমে এক নিস্তব্ধ পরিবেশ। প্রতিদিনকার ব্যস্ততম এই বাজারে সরকার নির্ধারিত কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ব্যতিত অন্য দোকানপাট বন্ধ আছে। এই বাজারে সাপ্তাহিক হাট ব্যতিত প্রতিটি গলিতেই সুনসান নিরবতা। তারপরও কাজের সন্ধানে বাইরে বের হয়ে অনেকেই পুলিশের বাঁধার মুখে পড়ছেন। এই বাজারে পুলিশ সদস্যদের মাইকিং করতে দেখা যায়।
আড়াইহাজার থানার এসআই রোকনুজ্জামান বলেন, মানুষকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলাচল করতে মাইকে অনুরোধ করা হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই যেন লোক সমাগম হতে না পারে আমরা সেদিকটা খেয়াল রাখছি।
আড়াইহাজার পৌরসভা বাজারে ফার্মেসি, কনফেকশনারি ও কাঁচা বাজার ব্যতিত সকল প্রকার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ আছে। লোক সমাগম ঠেকাতে পুলিশ সদ্যদের মাইকিং চলছিল। দায়িত্বরত এসআই আশাদুজ্জামান তালুকদার বলেন, বাজারে লোক সমাগম ঠেকাতে আমরা মাইকিং করে যাচ্ছি। তার পরও মানুষকে ঠেকানো যাচ্ছে না। তারা সামাজিক দূরত্ব বাজায় রাখার বিষয়টি মানছে না। তার পরও আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।
ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের বৈলারকান্দী এলাকার রিকশা চালক বাছেদ জানান, সারাদিনে মাত্র ৯০ টাকা আয় করেছি। রিকশার জমা দিতে ১০০টাকা। সংসারে চারজন জন সদস্য। এতে আমার সংসার চলবে না। আগে এই সময়টাতে ৩০০ থেকে ৪০০টাকা আয় করতে পারতাম। এখন তা হচ্ছে না।
আড়াইহাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সোহাগ হোসেন বলেন, খেটে খাওয়া দিনমজুর মানুষের জন্য দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রলালয়ের মানবিক সহায়তা কর্মসূচির আওতায় প্রত্যেক পরিবারকে ১০ কেজি চালসহ বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। এর সংখ্যা পর্যায়ক্রমে আরো বৃদ্ধি করা হবে। স্থানীয় অর্থলগ্নিকারী প্রতিষ্ঠানর এনজিওর ঋণের কিস্তি আদায় বন্ধের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আড়াইহাজার থানার ওসি (তদন্ত) আমীর হোসেন বলেন, উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের দুইটি দল জনসমাগম ঠেকাতে কাজ করছেন
গোপনীয়তা নীতি | এই ওয়েবসাইটের কোন লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।